Header Ads

Header ADS

ইলশেগুঁড়ি মাসিক অনলাইন পত্রিকা ১৫

 



সম্পাদকীয়

সৃজন চলে গেছে একবছর হল। 
আসলে, সৃজন যায় নি কোথাও, 
প্রতিমূহূর্তে সে আছে কবিতার মধ্যে।
এই সংখ্যার সঙ্গে আবার দেওয়া হল 
সৃজন স্মৃতি ক্রোড়পত্র।
সবাই ভাল থেকো।


কিশোর কলম
মুক্তগদ্য - মেধা

কিশোর কলম - বাবুই


পুর্নমুদ্রন


সম্পাদকীয় ১ ঃ 
আমিও চা বানাচ্ছি সৃজন - দেবব্রত ঘোষ মলয় ৮১  

সম্পাদকীয় ২ ঃ 
যেতে যেতে একলা পথে - তুহিন কান্তি বিশ্বাস ৮৩

সৃ জ ন  স্মৃ তি

অজাতশত্রু আমার গনেশ - মাধবী পাল ৮৫
সৃজন ঃ স্মৃতিচারণা - চিন্ময় মণ্ডল ৮৬
এখন আমি কাকে লিঙ্ক পাঠাবো গণেশদা? অরিন্দম রায় ৮৮
বন্ধন - নন্দা রায়পোড়েল ৯০
কবিতায় শ্রদ্ধার্ঘ্য ঃ কবি সৃজন পাল - দীপক আঢ্য ৯১
গণেশ ঃ কৌস্তভ আচার্য ৯২
সৃজন - দিলীপ পাল ঃ ৯২
যদি আর একটু আগে পৌঁছাতাম - আমিমোন ইসলাম ৯২
শেষ অঙ্ক - আর্যতীর্থ ৯৩
শান্তি পাও চিরনিদ্রালোকে ঃ অমলেন্দু কর্মকার ৯৩
সৃজনের শর্তই রোপন নতুন ঃ দেবব্রত ঘোষ মলয় ৯৪
সময়ের মাদল ঃ প্রদীপ কুমার পাল ৯৪

সৃ জ নে র  ক বি তা 

একখানা গান, উৎসব, হেনরি ওলোঙ্গার গান ৯৬
বিবাহবার্ষিকী, জলরেখা, শ্মশানের গান, বৃষ্টিকথা ৯৭
মাঝ রাত্তিরে, কলকাতা - ২০১৭, কলকাতা - ২০১৮ ৯৮ 

তা ৎ ক্ষ ণি ক  প্র তি ক্রি য়া  

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া - বিভিন্ন মানুষের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া



কবি নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী স্মরণে

বটু কৃষ্ণ হালদার

বঙ্গ তনয়ার আশিস ধন্য, বীণাবাদন রত শুভ্র কোমলের বর পুত্র
অমলিন রোদ্দুর হয়ে ফিরে গেছে না ফেরার দেশে।
কালজয়ী স্রষ্টা, বাংলার মহিরুহর  ছন্দ পতন
সাহিত্য সম্রাট, তুমি রেখে গেছো একরাশ নীরবতা ও শূন্যতা।
সাহিত্য সিংহাসন শূন্য আজি এ মহা সমারোহ, 
জনকুলায়ের  সম্বলহীন শেষ আশ্রয় স্থল। 
২৫ শে ডিসেম্বর,মহাআড়ম্বর সত্যই ফিকে হয়ে গেলো,
সোনালী রেখার লুকোচুরির খেলা।
কলকাতার উলঙ্গ শিশুরা হারিয়ে যেতে যেতে 
গায়ে মেখে নেয় সোনালীর উষ্ণ পরশ টুকু,
কনকনে ঠান্ডায় কঠিন বাস্তবটাকে ঢেকে দিলে 
মখমলের রঙিন চাদর দিয়ে।
তরবারির খোঁচায় জাগিয়ে দিলে 
সুপ্ত সমাজের ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির বাস্তব চিত্র।
কঠিন, নির্মম, বাস্তববোধ দাবানল হয়ে 
ফুটে উঠে ছিল ঘূণধরা সমাজের চরিত্র। 
তাই তো শুধু অবোধ শিশুটি অবলীলায় বলে ওঠে, 
‘‘রাজা তোর কাপড় কোথায়?’’
সত্যই, আজি এই সময় অমলকান্তির মলিন রোদ্দুর, 
আলো আঁধারের মেঘ হয়ে, পূবের ঈশান কোন হতে বৃষ্টি হয়ে অঝোরে ঝরে পড়েছে জনতার সরোবরে।
এ বিচিত্র সেলুকাসের দেশে তোমার স্বপ্নের ইচ্ছে উড়ান হয়ে ভেসে গিয়েছে নীল দিগন্তকে ছাড়িয়ে,  দূর হতে  বহু দূরে... 
তুমিই তো রোদ্দুর হয়ে ভেসে যেতে চেয়ে ছিলে 
ওই সমুদ্দুরে প্রান্তর ছাড়িয়ে জীবনের উচ্চ শিখরে অভিলাসা হয়ে।

স্বপ্ন

সুদীপ্ত পারিয়াল 


স্বপ্নগুলো আর কথা হতে চায় না
এক সুনিবিড় অলঙ্কারের আড়ালে ঘুমিয়ে পড়ে আমার প্রেম হতে চাওয়া প্রিয় মুহূর্তগুলো
খসে পড়ে চোখের পলকে,
কত জন্মের সাধনার পর ব্যথার বুক চিরে আমি খুঁজে নিতে চাই ওদের
কিন্তু বারেবারে মরীচিকার মতন উবে যায়
আমার প্রিয় প্রেমের পরশ;
খুব কাছ থেকে রোজ দেখি তাকে,
কিন্তু আগলে ধরতে গেলেই উবে যায় আমার কষ্টলালিত প্রেমের পরশ,
বোধহয় বারবার ভুল হয়ে যায় প্রেমের কলধ্বনির,
আমার স্বপ্নে দেখা সেই বাঁশিওয়ালা রোজ আমাকে নতুন একটা করে সুর বেঁধে দেয়,
অঙ্গন জুড়ে বেড়ে ওঠে আমার গভীর গোপন প্রেমের চারাগাছটা;
যার জন্য সাজাতে থাকি নতুন নতুন মাধুরীর মালা,
সেই আমাকে আবার বলে প্রেমের আকাশে পাখা মেলে উড়ে বেড়াতে, তার হাত ধরে নতুন করে উড়তে শিখি ... 
নতুন করে সুধা পায় আমার প্রেমের চারাগাছ,
বেদনা বলে যায় বারেবার প্রেম একবার নয় আসে বহুবার,শুধু রূপ বদলে যায় প্রতিটি বার।


নগ্ন বাস্তব

গৌর মোহন ঘোষ

একটা অর্ধ উলঙ্গ ছেলে চলছে রাজপথে
চোখে মুখে তার কি দাম্ভিকতা,
আকাশতলে উত্থিত মুষ্ঠিতে বিজয়গর্ব।
রাজপথের দুপাশে সারিসারি নরনারী
মুখে চোখে তাদের উৎসুক চাহনি।
এটাই বুঝি সভ্যতার বিজয় রথ
কিংবা আধুনিকতার প্রতিচ্ছবি।
একে একে পোশাক খুলে নেমে পড়ে পথে,
ক্রমশ লম্বা হতে থাকে নির্লজ্জের সারি।
অবশিষ্টরা প্রানপণে চেপে ধরে
বিবেকের শেষ চিহ্নটুকু।
দমকা বাতাসের নখরাঘাতে
ক্ষতবিক্ষত করে দেয় মনুষ্যত্বের চেতনা।



কেন আমি কবিতা লিখিনি 


দেবব্রত ঘোষ মলয়


মহতি সাহিত্যসভায় তোমরা প্রশ্ন করেছিলে 
কেন আমি কবিতা লিখি নি এতদিন 
উপোসি চাঁদ মেঘের বাধা ঠেলে 
বৃষ্টির মত ছড়িয়ে দেয় নির্দয় জোৎস্না

কখনো দেখেছো কি শ্বাস নিতে না পেরে
মরে যাওয়া মানুষের গণ চিতা জ্বলে
এর থেকে বেশি জন অনাহারে থেকে
রোজ রোজ মরে যায় পোকার মতই।

এরপরও ফুল ফোটে এরপরও চাঁদ ওঠে 
এরপরও বয়ে যায় নদী কুল কুল
এসব দৃশ্য দেখে ঘুমহীন মাঝরাতে
কবিতা বিদায় নিল সেই কবে থেকে

মুক্তগদ্য
মেধা

আজ এসেছি আমার শিকড়ের সন্ধানে, দূর প্রান্তের গ্রামে আমার বাড়ি, এখানকারই মানুষ।  দুবছর পর আবার এইখানে। সেই স্মৃতিগুলো এখনো জ্বলজ্বলে,বাড়ি এসে পিছনের কাঁচা রাস্তাতে এলাম। স্বাভাবিক ভাবেই বাড়িতে আসা হলেও এইদিকে ঠিক আসা হয় না...তাও হাঁটতে হাঁটতে এসেছিলাম। দূরে ঐদিকে এখন যে শান্ত-শীতল-সবুজ, সেখানের রক্তিম পলাশ গাছটা আবারও মনে করিয়ে দেয় মানুষে-মানুষে বিদ্বেষের পরিণাম। কাঁচামাটির রাস্তা ধরে আরেকটু এগিয়ে গেলাম। ব্যস্ত বাজারের মাঝ দিয়ে চলে গেছে ব্যস্ত পিচের রাস্তা, সেখান দিয়ে চলছে দূর-দুরান্তের যান...
হাট-মন্দির-মসজিদ সব মানুষে ভর্তি। এই হইচই কোলাহলের মাঝেও যেন শান্তি আছে, আছে সুন্দর হাসিখুশি মানুষের দল ; সেই কুড়ি বছর আগের বিদ্বেষের লেলিহান বহ্নিশিখা আজ শীতল বাতাসে নিভে গেছে...

এখানে সবাই আমার চেনা। ও পাশ দিয়ে সাইকেল নিয়ে মালাকার কাকু দোকানে গেল, যাবার সময় ঘাড়টা নেড়ে গেল। দোকানে বসে থাকা মলয়দা কুশল বিনিময় করলো। মইনুল ওদিকে মাছ ধরছিল,আমাকে দেখে তো উঠে এসে আমার খোঁজ নিলো। 
'তা দাভাই অনেকদিন পরেই তো এলে, এবার কিছুদিন থেকে যেও, তোমার পছন্দসই বিরিয়ানিটা কিন্তু রাতেই খাওয়াবো'।
আমি বললাম, ' সে না হয় ঠিক আছে, আমি যাব। আর তুই যে মাছটা ধরলি সেটার ঝাল না হয় আমি বানালাম, তুই খেয়ে যাস।'

তা ঠিক। অনেকদিন পর এসেছি, কাজের ফাঁকে আসা প্রায় হয় না, এসেই সবার সাথে কথা বলেও বেশ ভালোই লাগছে। বাড়ি ঢুকলাম, দোরে দেখি মাছটা দিয়ে গেছে। বেশ করে ভেজে, রসা-কষা করলাম।  বিকেলের ঘুমটা শেষ করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল, মুখ-হাত ধুতে গিয়ে সন্ধ্যা। বসেছিলাম মাটির বারান্দাতে, ওপাশের পাকা ঘরে জেঠিমা সন্ধ্যে দিচ্ছিলেন, আর ওই বাজারের দিক থেকে আজানের  ডাক ভেসে আসছিল আর তা শাঁখের আওয়াজের সাথে মিশে বেশ লাগছিলো। 

আমার, না বরং আমাদের, আমাদের এই ছোট অখ্যাত, আরপাঁচজনের কাছে নাম-না-জানা গ্রামটা প্রথম থেকেই এরকম, বেশ সুন্দর আর এক। সবাই নিজের কাজে ব্যস্ত, সকালের পাখির ডাকে ওঠে আর রাতে জোনাকির আলোয় শুতে যায়।
তবুও কুড়ি বছরের আগের স্মৃতি আজও ভাসিয়ে নিয়ে আসে অজানা কিছু মানুষের মারপিট যা ঘটেছিল ওই পলাশ গাছটার নীচে। ছোট গ্রামের পিচের রাস্তাটা সভ্যতার নিশানি, সেখানেই বহিরাগত কিছু অসভ্য মানুষের ধর্মবিদ্বেষ দেখা দিয়েছিল। যে অগ্নিশিখা আজ শান্ত, যা সর্বদাই শান্ত ছিল আমাদের গ্রামে সেটা সেদিন কিছু বাইরের লোক এসে উস্কে দিলো, যেটা ধর্মের সাথে ধর্মের ছিল না, ছিল কিছু উন্মত্ত-উন্মাদ-উগ্র মানুষদের।  কিন্তু আমাদের "ছোট" গ্রাম ছোটই ছিল...তাকে ধরতে পারেনি সেই  বড় লেলিহান শিখা, সেই বড় আর ঠুনকো তথাকথিত ধর্ম-মানসিকতা। যার শেষের পরিণাম হলো কতগুলি অজ্ঞাত-পরিচয় মৃত মানুষ, যাদের নিয়ে যাওয়া হলো গোরস্থানে আর শ্মশানে, পঞ্চভূতে মিশিয়ে দিতে।

অবশ্য এত কথা ভাবতে ভাবতে বেশ সময় কেটে গেল, রাতও নেমে এলো  রাতের বিরিয়ানিটা খেতে গেলাম তারপর। এসে শুয়ে পড়লাম। চোখ বুজতে না বুজতেই ভোর হয়ে গেল। গ্রামে বুঝি ভোরটা শহরের থেকে আগেই আসে। মোরোগটাও ডাক দিল, উঠে পড়লাম। একটু ওই কাঁচা রাস্তাধরে এগিয়ে গেলাম নদীর দিকে। অনেকেই উঠে পড়েছে, নিজের কাজে যাচ্ছে। বাউনকাকা ওই গোরস্থানের পাশের জবা গাছটা থেকে ফুলটা তুলে নিলেন, গেলেন নদীর দিকে। লাল টকটকে সূর্যটা সবে উঠলো, দিনের শুরু হলো, বেশ হাওয়া দিচ্ছিল নদীর দিকে। গেলাম একটু কাছে, সুবলজেঠু হাত নেড়ে ডেকে নিলো নৌকায়, উঠেও গেলাম। কুয়াশার মাঝে নদীর জলে সূর্যের আলো, বেশ আলতা-গোলা জল।

বাউনকাকা সূর্যপ্রণাম করছিলেন, 
”ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম । ধান্তারীং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্ ।।”
ওদিক দিতে ভেসে এলো আজানের সুর, "হাইয়া আলাস সালাহ" - নামাজের জন্য আসো ... মিলে গেল একে অপরের সাথে। দুজনেই ঈশ্বর সন্ধান করছেন, তাঁকে ডাকছেন। 
নৌকার পাশ দিয়ে ভেসে গেলওই লাল জবাটা বোধ হয় ঈশ্বরের খোঁজে।
                            

কিশোর কলম
বাবুই


চারটি দিনের আনন্দের
 হলো যে আজ ইতি,
আসবে মা পরের বছর
ঠোঁটেতে নিয়ে গীতি।

কয়েকটি দিনের জন্য
বছর চেয়ে দেখে,
না পাওয়া ইচ্ছা গুলি
কোন সেই জগতে থাকে।

অদ্ভুত বিষাদে এই মন
মা তোমাকেই চায় ,
কিছু না বলেও সেই মুখ
কি যেনো বলে যায়।

মা কে বলি কর জোড়ে,
সবাই সুস্থ থাক ,
সবার, পেট ভরে থাকুক
আমিত্ব মুছে যাক।

বাবুই বললো এবার আমি 
একটু খাবো হাওয়া,
ভালোর ছন্দে ,বলি তোমাকে
"শুভ বিজয়া"










সম্পাদকীয় - ১


আমিও চা বানাচ্ছি সৃজন

দেবব্রত ঘোষ মলয় 

সম্পাদক, ইলশেগুঁড়ি পত্রিকা





সম্পাদক হবার কথা ছিল সৃজনের। সব দিক দিয়েই ও ছিল যোগ্যতম। কিন্তু মানত না। একটাই কথা — পত্রিকা হোক, আমার সব দিয়ে পাশে আছি, কিন্তু সম্পাদক হওয়া আমার কম্ম নয়। না না, যুগ্ম, সহ কোন কিছু নয়। অগত্যা আমাকেই লিখতে হত নির্জন সম্পাদকীয়। গত পাঁচ বছরে চোদ্দটা সম্পাদকীয় যা হোক করে উৎরে দিয়েছি, আজ পনের নম্বরে এসে কলম পাথর হয়ে যাচ্ছে। কান্নার নদী সাঁতরে ওঠার চেষ্টা করছি আপ্রাণ।
কোথা থেকে শুরু করি। কবি সৃজন তো পরে, অনেক আগে হাফপ্যান্ট বয়সের শ্রেণী সহপাঠী গণেশ পাল। ক্লাসে অংকের খাতায় নির্বিকার চিত্তে ছড়া লেখে, পরীক্ষার খাতায় এঁকে দিয়ে আসে ছবি। শুধু ভালো লাগে না এই অজুহাতে বন্ধ করে দেয় স্কুলে আসা, অথচ অংকের মাথা আমাদের ঈর্ষার কারণ হত।
যখন আমাদের সবে গোঁফ গজাচ্ছে, তখনই ওর নেতৃত্বে আমরা সুকান্ত পাঠচক্র করে শুরু করেছি বাচ্ছাদের বিনাপয়সার কোচিং, রবীন্দ্র জয়ন্তী, নাটক আর সমাজের জন্য কাজ। সমর্থন ছিল ওর বাড়ির সামাজিক সাংস্কৃতিক খোলা আবহাওয়া, দাদা কার্তিকদার সক্রিয় সমর্থন, সঙ্গে রঘুদা আর অন্যরা। আমরা তখন মেয়েদের দেখলে একটু অপ্রতিভ হয়ে যাই, ও সেই বাল্য বয়সেই প্রেম নামক নিষিদ্ধ বিষয় আত্মস্থ করে ফেলল। আর সহজাত দক্ষতায় কবিতা ওর প্রিয় সাথী হয়ে উঠল। ছোট থেকেই বন্ধুঅন্ত প্রাণ ছিল সৃজন। ওর পত্রিকায় দুজনের লেখা থাকবেই, আমার আর ওর প্রেমের। বলতাম, স্বজন পোষন করছিস তো! মৃদু হেসে প্রশ্রয় দিত। কোনটা যে ওর বেশি কাছের, প্রেম না কবিতা সেটা আমি আজও বুঝে উঠতে পারলাম না।
আর বুঝে উঠতে পারলাম না আজকের এই আত্মপ্রচারের যুগেও একটা মানুষ কিভাবে এত নির্লিপ্ত থাকতে পারে। যখন দেখি একটা লেখা লিখেই ফেসবুকে না দিতে পারলে বদহজম হওয়ার প্রবণতা, তখনই এক একটা অসম্ভব উন্নত কবিতা লিখে ফেলে রেখে দিতে সৃজন। অনেক দিন পরে আবার তাকে উদ্ধার করে কাটাছেঁড়া করত অসম্ভব দক্ষতায়। প্রকাশের ব্যাপারে খুবই অনাগ্রহী ছিল। মূলতঃ কালধ্বনি, ভূমধ্যসাগর বা লালনের জন্যই লেখা দিত আর আমার নিরন্তর তাগাদায় ইলশেগুঁড়িতে। প্রতি সংখ্যার আগেই বলত এবার আমায় বাদ দে। ইদানিং বেশ কিছু পত্রিকা ওর লেখা পাচ্ছিল হঠাৎই।
খুবই খুঁতখুঁতে ছিল নিজের লেখার ব্যাপারে। আমি আজও নিশ্চিত হতে পারিনি ইলশেগুঁড়ির একটি সংখ্যাও ওর মনের মত হয়েছে কিনা, সম্ভবতঃ হয়নি। বলেছিলাম, তুই সম্পাদনা কর একটা পত্রিকার, বাকি সব কাজ আমি করে দেব। ওর সেই সরল হাসি আর একটাই কথা — কেউ লেখা দেবে না এই খুঁতখুঁতে সম্পাদককে।
প্রকাশনার শুরু করেছিলাম ওর ছোটদের ছড়ার বই ‘‘মেঘের মুলুক’’ দিয়ে। ওর কন্যা আমাদের আদরের মামন এঁকে দিয়েছিল অসাধারণ ছবিগুলি। উৎসর্গ করেছিল মামন, তার বন্ধু ও তাদের বন্ধুদের। সম্পূর্ণ রঙিন অফসেটে ছাপা বইটি অসাধারণ জনপ্রিয়তা পায় আর ইলশেগুঁড়ি প্রকাশন পায় পথ চলার গতি।
ওর ভালবাসার জায়গা ছিল কালধ্বনি, সন্দীপদার লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরী। গত বছর কলকাতা বইমেলায় আমি অনেকটা সময় লাইব্রেরি স্টলে আর কালধ্বনি স্টলে কাটিয়েছি সন্দীপদা, প্রশান্তদা আর সৃজনের সাথে। আমরা পাঁচ সম্পাদকমণ্ডলীর বন্ধু বেশ কয়েকটি লিটল ম্যাগাজিন মেলায় অংশ নিয়েছিলাম। সৃজন কি জানতে পেরেছিল আর মেলায় আসা হবে না।
আমার পত্রিকা জগতে হাতেখড়ি সৃজনের হাত ধরেই। ও বলত লিটল ম্যাগাজিন করতে গেলে আপাদমস্তক সৎ হতে হবে। আর লেখকদের সৌজন্য সংখ্যা না দেবার সংস্কৃতির তীব্র বিরোধিতা করত।
সমাজ চেতনাও ওর হাত ধরেই। প্রতুলদার প্রথম জীবনেই আমাদের বাকসাড়ায় ওর উদ্যোগে অনুষ্ঠান, বাকসাড়া লাইব্রেরিতে লিটল ম্যাগাজিন মেলা ওর উদ্যোগেই, আমরা ছিলাম সহযোগী মাত্র। বাদল সরকারের পথনাটক ও চিনিয়েছিল। আর সিনে ক্লাব। গত শীতে আন্দুলে উচ্চাঙ্গ সংগীতের আসরে আমাদের পরিকল্পনা হয়েছিল আন্দুল-সাঁতরাগাছি অঞ্চলে আমরা লিটল ম্যাগাজিন মেলা করব, ইলশেগুঁড়ি ও অন্যদের পরিচালনায়। ওর এই অদম্য প্রাণশক্তি আমাদের উদ্যম যোগাত।
খুব কষ্ট পেত বর্তমান সমাজের ভারসাম্যহীনতায়। জাতপাত আর সাম্প্রদায়িকতার অনেক উঁচুতে ছিল ওর অবস্থান। এ বিষয়ে তর্ক খুব ভালবাসত, ওর ক্ষুরধার যুক্তির কাছে বারে বারে হেরে যেতে হত আমাদের। খুব ভাবত তাদের কথা, যাদের এই ভারতেও দুবেলা ভাত জোটে না। ওর উদ্যোগেই ইলশেগুঁড়ি ত্রাণ পাঠিয়েছিল আম্ফান দুর্গতদের। কোন কাজ করে তার প্রচার করার কট্টর বিরোধী ছিল ও, ফলে অনেকেই জানতে পারেনি কত মানুষের উপকার করেছিল ও।
আপাদমস্তক সৎ ছিল গণেশ। মেয়ের বিয়েতে সব অভ্যাগতদের হাতে সুদৃশ্য জুট ব্যাগে একটি করে গাছের চারা উপহার দিয়ে বার্তা দিয়েছিল আমাদের এই ক্ষয়িষ্ণু সমাজকে। ওর  সেই গোলাপ গাছ আজ আমাদের বাগানে ফুলে ভরা, হয়ত ওর নির্মল ছোঁয়াই ভালবাসত গাছ আর ফুলের দল।
কর্মক্ষেত্রেও খুবই সফল হয়েছিল ও। বহু ছেলেমেয়ে ওর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কর্মজগতে। চরিত্রে বোহেমিয়ান হয়েও দুহাতে জড়িয়ে রেখেছিল ওর পরিবারকে, আর আমাদের সবাইকে নিয়ে ওর বৃহত্তর পরিবারকে।
ওর প্রিয় পানীয় ছিল চা। সবার আগে অফিসে এসে যেত, যখন আমি যেতাম ওর অফিসে, নিজের হাতে চা করে খাওয়াত আমাদের। আমাদের বাড়িতে কোনদিন কলিং বেল বাজাত না, হেঁকে জানান দিত উপস্থিতি — দূর্বা চা কর। ঘন ঘন সিগারেট খাওয়া নিয়ে দুর্বার বকুনিতে ওর সেই ভুবন ভোলানো হাসিটা দিয়েই সামলে নিত। গত বছর আমাদের আরো এক সম্পাদক দেবাশীষ এর অকাল প্রয়াণ ওকে খুবই কষ্ট দিয়েছিল, আর ওর প্রয়াণে কেঁদে আকুল দেবার কন্যা। আসলে ভালবাসা ছিল ওর সহজাত। আজও মনে পড়ে আমাদের বন্ধুদের নিয়ে ওর সেই প্রথা ভাঙা বিয়ের ঘটনা, প্রকৃত প্রেমের এক অনন্য উত্তরণ। মামন সেই স্বর্গীয় ভালবাসার ফসল, তাই তো অত ভালো মনের মানুষ হয়েছে ওর কন্যা।
ওর কথা বলতে বসলে শুধু সম্পাদকীয়র বরাদ্দ পাতাটাই নয়, গোটা পত্রিকাই শেষ হয়ে যাবে। আজ এক পাহাড় মন খারাপ নিয়ে শুধু একটাই কথা ভাবি, নিজের শরীরের প্রতি যদি একটু সুবিচার করত তাহলে আমরা হারাতাম না এক অমূল্য সম্পদ। 
তুই শুনে খুশি হবি গণেশ, গত একমাসে আমি নিজের হাতে চা বানাতে পারছি, তোকে খাওয়াতে পারলাম না গনেশ, নবগঠিত ইলশেগুঁড়ি দপ্তরে বসাও হল না তোর।

সম্পাদকীয় - ২

যেতে যেতে একলা পথে

তুহিন কান্তি বিশ্বাস

সম্পাদক, সুস্থ সমাজ পত্রিকা, ইলশেগুঁড়ি






অনেক কথা আছে, মন যা বিশ্বাস করতে নারাজ — যেমন এক এক করে বৃত্ত থেকে স্বজনদের চলে যাওয়া — সৃজনের চলে যাওয়া।  সৃজন নামের থেকেও ওকে আবাল্য যে নামে জেনেছি তাতেই বেশি করে স্বচ্ছন্দ বোধ করি — গণেশ। বয়স  বাড়ার সাথে সাথে আমরা সবাই কম বেশি পাল্টেছি, পাল্টায়নি শুধু গণেশ। যেমন ছিল ৭৩ সালের ক্লাস ফাইভের সাত সকালে, তেমন ভাবেই ৫৫ বছর বয়সে সবাইকে টাটা করতে করতে জীবনকে তুড়ি মেরে পাড়ি দিলো মেঘের মুলুকে। সহজ করে নিয়েছিল জীবনের ভূগোলকে, প্রথম থেকেই একই জীবন দর্শনের ছায়াপথ ধরে হেঁটে গেছে অলিতে গলিতে।  
দেখা হয়েছিল বড় স্কুলের গণ্ডিতে পা রাখার পরেই, ক্রমে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে উঁচু ক্লাসের ঘরের সিঁড়িতে পা রাখার সাথে সাথে। চে গুয়েভারা বা ফিদেল কাস্ত্রো নামগুলো তখনো অপরিচিত ছিল, চেনালো গণেশ। পড়ার বইয়ের বাইরের বই গুলো কেমন দেখতে, কি ছবি  আঁকা আছে তাতে অক্ষরের জাল বুননে, পৃথিবীর অন্য প্রান্তে মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই কতটা মজবুত তার গল্প শোনাতো সেই বয়সেই। সময় বয়ে গেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, শুধু গল্প শুনতে শুনতে, আর অজানা স্বপ্নের বিভোরে। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর তিন মাসের অবসরের সময়ে  নতুন এক দিগন্তের দিকে টেনে নিয়ে গেলো — লিট্ল ম্যাগাজিন। কার্তিকদা, রঘুদা এবং আরও কিছু অগ্রজ দাদাদের সাথে ওর পাশে আমাকেও বসিয়ে দিলো নতুন সৃষ্টি সুখের উল্লাসের সন্ধানে — প্রকাশিত  হ’ল প্রথম হাতে লেখা লিট্ল ম্যাগাজিন  ‘ক্যাকটাস’। ক্যাকটাসের যাত্রা দীর্ঘদিন ছিল অপ্রতিহত, লেখনির হাতেখড়ি আমার ওই জায়গা থেকেই ধরিয়ে দিয়েছিলো গণেশ।
গণেশের ক্ষুরধার লেখনীর পরিচয় পেয়েছিলাম তখন থেকেই, সাবলীল অথচ সুগভীর ছিল সে লেখা।  সাবলীল ছিল ওর জীবন চলার পথ, যাকে বলে সত্যেরে লও সহজে।  ১৯৮১ সাল, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আমরা, অঙ্ক পরীক্ষায় দাঁত ফোটানো ছিল কঠিন, খুব বেশি সুবিধা তেমন কেউ করতে পারছি না । আমার থেকে কিছুটা দূরে বসে ছিল গণেশ, পরীক্ষা প্রায় শেষের মুখে, গণেশ কিছুটা দূর থেকে আমাকে ডেকে হাসতে হাসতে দেখালো অঙ্কের খাতা — পাতা জুড়ে সুন্দর করে এঁকেছে মা কালির মুখ জবা ফুলের মালা সহ, তলায় লেখা ‘জয় জয় মা কালী’। বললো এর থেকে ভালো অঙ্ক  আর কি হাতে পারে বলতো? অবাক হয়ে গিয়েছিলাম কত সহজ করে নিয়েছিল কঠিন অঙ্ককে। আসলে কোনো অংকের হিসাব ওকে বেঁধে ফেলতে পারে নি। মাধবীকে বিয়ে করার অধ্যায়টাও ছিল সরল সমীকরণে।  হঠাৎ একদিন এসে জানালো সেই দিনই ওর বিয়ে, যেতে হবে আমাদের বন্ধুদের।  ধুতি, পাঞ্জাবি বা টোপর ছাড়াই সাধারণ পোশাকে এবং মাধবীকেও সেই সাধারণ বেশে গান এর আড্ডা দিয়ে সেরে ফেললো বিয়ের আসর।  
প্রথম ছাপা অক্ষরে ওর সৃষ্টির প্রকাশ ‘স্বাক্ষী থাকুক কলাবতী ফুল’ নিয়ে যেদিন উপস্থিত হয়েছিল আমাদের বাড়িতে, মুখে ছিল এক অনাবিল এক স্বর্গীয় হাসি।  প্রথম সৃষ্টির প্রথম পাতায় ঝকঝকে হস্তাক্ষরে আমার নাম লিখে তুলে দিয়েছিল হাতে, এখনো আমার বাড়ির বইয়ের আলমারিতে সেই সৃষ্টি তাকিয়ে আছে, শুধু নেই স্রষ্টা। লেখার ফলগু ধারা ক্রমে ক্রমে বিকশিত হয়েছে বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে, আর প্রতিবারেই এসে শোনাতো সৃষ্টির ইতিহাস। গবেষণার কাজে এক সময় আমি প্রায় বাংলাদেশে যেতাম এবং ওখানকার সাহিত্য রসিক বেশ কিছু মানুষের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছিলাম। প্রতিবার ফিরে আসার  পর অধীর আগ্রহে বসে থাকতো সেই সব গল্প শোনার জন্য। অনেকবার সে দেশে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করলেও অপূর্ণ রয়ে গেলো সে বাসনা।
মাঝখানে দীর্ঘদিন ছিল বিরতি, কর্মসূত্রে বন্ধুরা নিজ নিজ কাজে ব্যাস্ত থাকার জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম, সাময়িক ছেদ হল যোগাযোগ। যোগসূত্র তৈরি করে দিল বাল্যবন্ধু মলয় (ইলশেগুঁড়ি সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ মলয়) — তৈরি হ’ল নতুন অধ্যায় ‘‘ইলশেগুঁড়ি’’। 
পাঁচ বাল্য তথা স্কুল বন্ধু আবার সুযোগ পেলাম এক নৌকায় পা রাখার।  চারা গাছ সবে ডালপালা মেলতে শুরু করেছে, ২০১৯ সালের মে মাসে বিদায় জানালো চিরসখা ‘দেবা’, আর এবার একবছর পরেই ফাঁকি দিলো গণেশ। ইলশেগুঁড়ির পরিবার থেকে সুহৃদরা চলে  যাচ্ছে। আমরা যারা রইলাম একলা পথে, তাদের পথ চলার বাতি দেখানোর জন্য থেকে যাবে দেবাশীষ এর গণেশ এর দেখানো আলো।  

সৃজন স্মৃতি

 অজাতশত্রু আমার গনেশ

মাধবী পাল
সৃজনের অর্ধেক আকাশ




এই অল্প সময়ের মধ্যে গনেশ সম্বন্ধে বলতে হলে ওর বহুমুখী চিন্তাধারার অনেকটাই অকথিত থেকে যাবে। ওর মধ্যে একটা সন্মোহনী ক্ষমতা ছিল। যার জন্য খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ছোট থেকে বড়ো সকলের মন জয় করতে পারতো। আমাকে অনেকেই বলেছে যে ও এমন একজন মানুষ যার সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে ইচ্ছা করে। ওর মতো  কর্তব্যপরায়ন সংবেদনশীল ঠাণ্ডা মাথার মানুষ খুব কমই আছে। ও যেটা বিশ্বাস করতেন সেটা করে দেখানোর সাহস তাঁর ছিল। নিজে ঘোর নাস্তিক ছিল, তবে অন্যের বিশ্বাসকে মর্যাদা দিত। 
মজার কথা বলতে ওর জুড়ি নেই। কি করে মাথায় আসত কে জানে। ওর লেখা ছড়াগুলো দেখলেই ওর ভিতরের মজার মানুষটাকে বোঝা যায়। বিশেষ করে বড়োদের ছড়া। এই বড়োদের ছড়া নিয়ে একটা বই প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, সেটা হয়ে উঠল না। আমার মনে হয় ও ইদানিংকালের শ্রেষ্ঠ ছড়াকার। আর কবিতা সম্বন্ধে বলব, নিরানব্বই ভাগই বুঝতে পারতাম না। যদিও কবিতা লিখে প্রথমে আমাকেই শোনাতো। জিজ্ঞেস করত বুঝতে পারলাম কিনা, আমি আবার পড়তে বলতাম,পড়তো। আমি একটা অর্থ  ধরে এগোতে থাকতাম কিন্তু পরক্ষনেই বুঝতে পারতাম ভুল রাস্তায় গেছি। ও তখন বলতো কেমন লাগলো বল। কেমন লাগলো কি বলবো! কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্য ওঠার দৃশ্য দেখার পর কেউ যদি জিজ্ঞেস করে কেমন লাগলো? বলবো অপূর্ব! তার বেশি বলতে পারবো না। কিন্তু আসলে তো তার বেশি। ওর কবিতা কিন্তু সেই বেশিটা বলতে পারতো। এক একটা শব্দ ছিল যেটা দিশাহীন ভাবে মনের মধ্যে ঘুরে বেড়াতো। আমি নিজে কখনো পড়তাম না। কবিতার তাল ছন্দ গণ্ডগোল হয়ে যেতো। ওর মুখ থেকে শুনতে ভালো লাগতো। ওর কবিতার মতোই ও নিজে। সমস্তরকম মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তি বললেও মনে হবে কি যেন বাকি রয়ে গেল।
আমার জীবনের প্রথম দশ বারো বছর বাদ দিলে পুরো সময়টা এক সঙ্গে কাটিয়েছি। অনেক আনন্দ যেমন ছিল অনেক কষ্টও ছিল। তবে সেই কষ্ট চাপা থাকত ওর অমলিন হাসির নিচে। যে হাসি শেষ দিন পর্যন্ত অবিকৃত ছিল। নানা চাপের মধ্যেও কর্তব্যপালনে কোন ত্রুটি ছিল না। তাই, এত তাড়াতাড়ি চলে গেল কেন, এই অভিযোগ ছাড়া ওর বিরুদ্ধে অন্য কোনো অভিযোগ নেই। রয়ে গেল আফসোস, বারবার মনে হচ্ছে আমার ওর প্রতি আর একটু যত্নশীল হওয়া দরকার ছিল। আর আফসোস রইল, তার কয়েকশো বই যা সে তিল তিল করে জমিয়ে ছিল অবসর জীবনে পড়বে বলে, সেই অবসর পেলনা। ওর মৃত্যুর পর এত মানুষ সমবেদনা জানাচ্ছেন দেখে মনে হচ্ছে ওর কি কোন শত্রু ছিল না? হ্যাঁ সত্যিই ছিল না। অনেককে দেখেছি র্নিদ্বিধায় তাদের সুখ দুঃখ অপরাধের কথা বলতে। তার কাছের (দূরের কি কেউ ছিল!) প্রত্যেকে সশরীরে এসে কিংবা ফোনের মাধ্যমে ওকে হারানোর যন্ত্রণার কথা বলেছে। মৃত্যু সংবাদ দিয়ে ওর প্রিয় মানুষদের যন্ত্রণা দেওয়াটা আমার কষ্টকে দ্বিগুণ করেছে। যাই হোক, এতদিন ওর সঙ্গে থেকে ওর মানবিক গুনগুলোর কিছু যদি পেয়ে থাকি চেষ্টা করব সেগুলো কাজে লাগাতে। আর ওর লেখাগুলো বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব রইল সেই সব পাঠকদের কাছে যাদের নিরন্তর উৎসাহে ওর এই উত্তরন।

 



শেষ অঙ্ক

আর্যতীর্থ 


একজন চলে গেছে হুট করে, ফিরবেনা আর সে। 
ভরা কোটালের সংসার ছেড়ে,
সময়ের মারপ্যাঁচে সীমানার বার সে,
শিকড় উপড়ে গেছে হঠাৎ সজোরে,
রোজনামচার থেকে মুছে গেছে আগামীর সব সংলাপ,
অনতিঅতীতে লেগে আঙুলের ছাপ।
একজন মারা গেছে, চেনা কেউ নয়, তবু কাহিনীর সাথে মিশে গাঢ় পরিচয়।
ভেসে আসা অচিনের বিয়োগকাহন, কিছুটা সময় ভারী করে দেয় মন,
আয়না প্রশ্ন করে, এত যে গল্প থেমে কমা সেমিকোলোনে,
কবে দাঁড়ি পড়ে যাবে পৃথিবীতে চলনে, 
জানিসও না কতটুকু তেল বাকি রয়েছে দিয়াতে,
কিছু কথা শেষ কর সমাপিকা ক্রিয়াতে।

আমি আয়নাকে দেখি, আয়না আমাকে। প্রতিবিম্বটি ঠিক চোখে চোখ রাখে,
চোখের এ ভাঁজগুলো আগে ছিলো নাকি?
কত কি ছাঁকনি দিয়ে দিনগুলো ছাঁকি, যে মুহূর্ত মনে রাখি তারাই কি দামী,
নাকি যাকে ভুলে গিয়ে এগোলাম আমি,
তারিখ বদলে দিয়ে স্মৃতিপথে মিলালো যে বিনা চিহ্নতে,
তারাই আসল মোড় ছিলো গল্পতে?
বুঝি না রহস্য সে, লাভ নেই আঁক কষে,
সময় আর আয়ু বড় চতুর লেখক, বোঝা মুশকিল খুব, কার কত অঙ্কে আটকে নাটক,
যবনিকা পড়ে যায় বড় ঝুপ করে, হঠাৎই বদলে পার্ট, 
স্বজনেরা সব সাজে শবদেহসাথী।

রোজের গল্প যত ভিন্নই হোক, শেষের অঙ্ক এক সবার নেহাতই।

প্রসঙ্গ সৃজনঃ স্মৃতিচারণা 

চিন্ময় মণ্ডল


কথায় আছে "মানব জীবনটাই অনিশ্চিত"। যতই বলি নিয়তি সবার বড় মানবোনা আর কিছুতেই, প্রেমের চেয়ে বড় এ জগতে আর কিছু নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি নিয়তির কোলে ঢলে পড়েছে তার প্রিয় স্বজনেরা বা যাদের অতি প্রিয়জন অসময়ে বিয়োগ হয়েছে তারাই এটা মর্মে মর্মে অনুভব করতে পারে নিয়তির কাছে সবকিছুই কেমন যেন অসহায়। অসময়ে আর অকস্মাৎ নিয়তির কাছে হার মানা কতটা হৃদয় বিদারক। তবে তাই বলে কি হাল ছেড়ে দিয়ে নিয়তির হাতে সভকিছু সঁপে দিয়ে বসে থাকতে হবে? নাকি জীবনটাকেই ঘেন্না করতে হবে? আমি বলি দুটোর কোনোটাই না। জীবনের ভালো দিকটাকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। জীবনটা তো শুধু দীর্ঘ হলেই হবে না জীবনটা বড়মাপের হতে হবে। জীবনে এমন কিছু ছাপ রেখে যেতে হবে যা নিয়তিকে হার মানিয়ে চির উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। সৃজন ওরফে আমাদের গণেশ সেরকমই এক ব্যক্তিত্ব যার সৃজনশীলতা তার কাজের মধ্যে তার সাহিত্যের মধ্যে চির অমর হয়ে থাকবে। আমরা যারা ওর খুবই নিকটের ছিলাম তাদের মূল লক্ষ্য হবে ওর ফেলে যাওয়া অসম্পূর্ণ কাজকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আসলে হেরে যাওয়া তো খুবই সহজ কিন্তু না হেরে সৃজনের সৃজনশীলতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই তো আমাদের জন্য বড় কাজ। যে সৃষ্টিশীলতা ওর প্রাণভোমরা ছিল সেই সৃষ্টি যাতে অমরত্ব পায় সেটা আমাদের দেখতে হবে। শেষ করতে হবে ওর অসম্পূর্ণ কাজ। সমবেদনা জানাই জীবনসঙ্গী মাধবীকে আর একমাত্র কন্যা সংহিতাকে। জানি এ ক্ষতি পূরণ হবার নয় তবুও বলবো আমরা সবাই আছি তোমাদের পাশে। বিপদে অপদে স্মরণ কোরো আমরা এগিয়ে যাবো। সর্বদা তোমাদের সাথে ছিলাম, আছি ও থাকবো। 

ছোটবেলাকার বন্ধু সৃজন, ওর কাছে লেখালিখির ব্যাপারে অনেক অনুপ্রেরণা পেয়েছি। ওর হাত ধরেই কলিকাতা লিটিল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্রে আমার সদস্যপদ নেওয়া তথা প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব সন্দীপদার সাথে পরিচিতি। ওর সাথে কত সময় কেটেছে কবিতা নিয়ে আলোচনায়। একসাথে বেড়াতে গিয়ে বসে গেছি আঞ্চলিক কবিতার কবিতা পাঠের আসরে। নদীর ধারে বসে ওর লেখা কবিতা শুনেছি আর আমার লেখা কবিতা শুনিয়েছি। কতদিন ফোনে ঘণ্টার পর ঘন্টা কাটিয়েছি সাহিত্য আলোচনায়। সমস্ত বিষয় নিয়েই আমাদের আলোচনা হত। সমসাময়িক বিষয় ভিত্তিক লেখায় ওর খুব টান ছিল আর সেটার জন্যে আমি যখনই কোনো সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কবিতা লিখেছি আগে ওকে পাঠিয়েছি। বহুবার উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও পেয়েছি। কতবার বলেছে "তুমি কবিতার বই ছাপাও এই সব কবিতা নিয়ে”। কবিতার বই হয়তো বেরোবে কিন্তু আমার প্রিয় বন্ধু সেটা দেখে যেতে পারলো না এটাই আক্ষেপ রয়ে যাবে। মানুষ হিসাবে সৃজন ছিল একেবারেই অন্য মাপের অন্য ব্যক্তিত্বের। চিরটাকাল শুধুই অপরের জন্যে ভেবেছে। পরের সেবায় ছিল অফুরান উৎসাহ। দুর্গতদের সাহায্যে ও সর্বদাই এগিয়ে আসতো ও সুষ্ঠ আয়োজনের মাধ্যমে বিলি বণ্টনের মাধ্যমে আর্তদের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিত। ভাবতে বড় কষ্ট হয় যে সেই সৃজন আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। যদিও এটা ঠিক আজ বন্ধু শুধু চোখেরই আড়ালে চলে গেছে কিন্তু তার উজ্জ্বল উপস্থিতি সর্বদাই আমাদের মধ্যে থাকবে। হৃদয়ের মণিকোঠায়, সকল অনুভবে সৃজন থাকবে আমাদের মাঝে। একটাই আপসোস ও যতটুকু অপরের জন্য ভাবতো তার সিকি ভাগও যদি নিজের জন্য ভাবতো তাহলে আজ আমাদের এই দিনটা দেখতে হত না। এ আপসোস থেকেই যাবে আজীবন আর এই আপসোস নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। দেবাশীষের পরে পরেই সৃজনকে এভাবে হারাতে হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। ভবিতব্যকে তো মেনে নিতেই হয় আর তাই সেই চরম সত্যটাকে মেনে নিয়েই বলিঃ 

"এমনি করে চলে যাওয়ার কিসের ছিল তাড়া?
থাকলে হয়ে মনের কোণায় বিষন্ন এক তারা।
গুমরে কাঁদে ব্যথায় এ প্রাণ বেলাশেষের গান,
বিহ্বল শোকে থমকে আছে ব্যাকুল এ পরাণ।
স্মৃতির কোণে থাকবে তুমি আমার আজীবন, 
তোমার পথের চিহ্ন জুড়েই ভরবে ত্রিভুবন। 
দাঁড়িয়ে তুমি থাকবে সদা লেখালিখির পারে,
চোখ মেললেই দেখতে পাবো দূরের তারাটারে।”



এখন আমি কাকে লিংক পাঠাবো গণেশদা ?


অরিন্দম রায়
সম্পাদক, লালন পত্রিকা



৩১ অক্টোবর, রাত ৯টা নাগাদ গপ্পো শুরু হল ফোনে, চলল প্রায় আধঘণ্টা। পরের দিন সন্ধেবেলায় খবর পেলাম — সৃজন পাল, আমাদের গণেশদা আর নেই! একটা জলজ্যান্ত মানুষ কিভাবে হঠাৎ ‘নেই’ হয়ে যেতে পারে? বিশ্বাস হচ্ছিল না। বারবার মনে হচ্ছিল ফেসবুকের অসংখ্য ফেক নিউজের মতো এই খবরটাও যেন মিথ্যে হয়। অন্তত এই খবরটা মিথ্যে হলে আমি মিথ্যের দাস হয়ে থাকব। কিন্তু না, ফোন করলাম গণেশদার মোবাইলে, অপর প্রান্ত থেকে গণেশদার মেয়ে মামন জানাল— ‘বাপি আর নেই’। মাসখানেক ধরেই নাকি বুকে একটা ব্যথা হত, বাড়িতে কাউকে জানায়নি। কেন জানাওনি গণেশদা? হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই সব শেষ। একে কী বলে? নিয়তি? নিয়তির আর কোনো কাজ নেই, ভালো মানুষগুলোকে পথ ভুলিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া? আমার চোখের সামনে তখন একটা কালো রঙের পর্দা, গলার ভিতর থেকে দলা পাকিয়ে কান্না উঠে আসতে চাইছে। নো ওয়ে! আমি কাঁদব না। হোয়াই শুড আই ক্রাই? কবে যেন একটা সিনেমা দেখেছিলাম ‘বয়েজ ডোন্ট ক্রাই’, ছেলেদের কাঁদতে নেই। সমাজ আমাকে শিখিয়েছে ছেলেদের কাঁদতে নেই। আমি একটা দমবন্ধ করা রাগ বুকের মধ্যে চেপে রেখে বাড়ি ফিরে এলাম। বাড়ি ফিরে দেখলাম, সৃজন পাল তাঁর কবিতায় লিখে রেখে গেছেন ‘আজ আমাদের মৃত্যুকালীন বৃন্দগান’ আর রাতে আমার ঘুমের মধ্যে বেজে উঠল পাগলাঘণ্টি! গণেশদা নেই! গণেশদা আর ফিরবে না। আমরা আর সাঁতরাগাছি রেলস্টেশনের ওভারব্রিজে লাস্ট লোকাল আসার আগে অব্দি আড্ডা মারব না কোনোদিন। এখন হয়ত মোগলসরাই স্টেশনে সৃজনদা খুঁজে পেয়েছেন তাঁরই কবিতার চরিত্র নাসিমাকে।
‘সৃজন’ এই নামটি গণেশদার লেখালেখির জন্য নেওয়া নাম। উপযুক্ত নামের চয়ন। মৃদুভাষী, অল্পকথার মানুষ। মুখে সবসময় শান্ত হাসি লেগে থাকত। 
কবি সৃজন পালের সঙ্গে আমার আলাপ ২০০০ সাল নাগাদ। আমাদের এক বন্ধু অনন্যবন্ধু রায়ের সূত্রে। অনন্য তখন লেখালেখি করে। আমিও অল্পস্বল্প লিখছি। বাকসাড়ার পালপাড়ায় মাটির ঘরে আলাপ হল তাঁর সঙ্গে। প্রথম সাক্ষাতেই মুগ্ধ হয়েছিলাম। কারণ তাঁর কবিতাভাবনার স্বচ্ছতা এবং সততা। এই আলাপ ঘনিষ্ঠতায় বদলাতে খুব বেশি সময় লাগেনি। কিছুদিনের মধ্যেই সৃজন পাল আমাদের সকলের গণেশদায় পরিণত হল। 
আমরা তখন একটি পত্রিকা করব ভাবছি। একদিন দুপুরে ফোনে (তখনও মোবাইল আসেনি) কথা হল আমাদের, কী আশ্চর্য! টেলিপ্যাথি কিনা জানা নেই আমার আর গণেশদার ভাবনা একজায়গায় মিলে গেল। পত্রিকার নাম পেয়ে গেলাম আমরা — ‘লালন’। লালনের নামাঙ্কন করে দিলেন শিল্পী দেবব্রত ঘোষ, গণেশদার দাদা কার্তিক পালের সৌজন্যে। সে এক অসাধারণ ক্যালিগ্রাফি। এভাবেই আমাদের ঘনিষ্টতা বন্ধুত্বে পরিণত হল। অসমবয়সী হলেও আমরা পরস্পরের বন্ধুই ছিলাম। আমার প্রথম কবিতা ছাপা হয় ‘কালধ্বনি’ পত্রিকায়। সেই লেখা গণেশদাই নিজে বেছে নিয়েছিল। কবিতায় মিতকথন, একটি লেখা হয়ে গেলে লেখাটিকে ফেলে রাখা, তারপর আবার সেই লেখাটির কাছে ফিরে যাওয়া — এসব আমি গণেশদার কাছেই শিখেছি। সেদিক থেকে গণেশদা আমার মিউজও বটে।
সারাজীবন এই মানুষটাকে প্রচারের পিছনে দৌড়তে দেখিনি। বাংলা কবিতার যে সাপ-লুডো-মইয়ের খেলা আজকালকার বাচ্চা ছেলেমেয়েরাও জানে সেই বিষয়ে কোনোদিন বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখিনি গণেশদার মধ্যে। নিজের লেখালেখি বিষয়ে ভয়ংকর খুঁতখুঁতে ছিল গণেশদা। লিরিক খুব পছন্দ করত। ছড়ার এমন হাত ক’জনের আছে? অথচ না কবি সৃজন পাল, না ছড়াকার সৃজন পাল কাউকেই সেভাবে খুঁজে দেখার চেষ্টা করলাম কি আমরা? মাঝে অনেকদিন যোগাযোগ ছিল না আমাদের। শারজায় চলে যেতে হয়েছিল গণেশদাকে চাকরিসূত্রে। আমিও জীবিকার দায়ে ভিন্ন জেলায়। ফলে বহুদিন কথাবার্তা হয়নি আমাদের মধ্যে। তারপর আবার সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের মিলিয়ে দিল। গণেশদার দুইল্যার বাড়িতে একবারই গিয়েছিলাম। ইদানিং হোয়াটসঅ্যাপ আর ফোনেই বেশি কথা হত। ‘লালন’ ওয়েব ম্যাগাজিন পড়ে খুব খুশি হয়েছিল গণেশদা। মেসেজ করে জানিয়েওছিল সেই কথা। লেখা চাইলাম ‘লালন’ উৎসব সংখ্যার জন্য। লেখা পাঠালো। তারপর নিজেই চলে গেল। অথচ এই গণেশদাই লিখেছিল — ‘যতই মুখ ফেরাস / লাথখোর পরমহংস জীবন/ তোকে ছাড়বে না।’ তাহলে কেন জীবনের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল নিজেই? আরেকটু খেয়াল রাখা যেত না নিজের স্বাস্থ্যের? খুব কি ক্ষতি হত তাতে? জানি এখন এসব অভিযোগের কোনো মানে নেই। তবু…

‘লালন’-এ লেখা বেরলে লিংক পাঠাতে বলেছিলে । এখন আমি কাকে লিংক পাঠাবো গণেশদা?  


বন্ধন

নন্দা রায়পোড়েল




‘‘ জন্মিলে মরিতে হবে,  অমর কে কোথা  রবে’’, কিংবা ‘‘মানুষ মরণশীল’’

বহুশ্রুত এই কথাগুলো জানলেও মন কিছুতেই মেনে নিতে চায় না যে, মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে দুটো তাজা প্রাণ অচিরে হারিয়ে যাবে। কখনো ভাবি নি গণেশ মানে সৃজনের জন্য লেখনি ধরতে হবে। শুনেছি ‘‘ স্মৃতি সতত সুখের’’। অথচ এ স্মৃতি শুধু দুঃখের বোঝা বাড়ায়।
আমাদের সময়ে বন্ধুর সংজ্ঞা ছিল বন্ধুই। ছেলে মেয়ে বিভেদ ছিল না। তাই আমার বেড়ে  ওঠা মেলামেশা সবই ওদের সঙ্গে। রোজ সন্ধ্যেবেলায় মলয়দের বাড়িতে আমাদের একটা আড্ডার আসর বসতো, মলয় নাম দিয়েছিল ছিটপিটানির আসর। ওই আসরে খেলা থেকে রাজনীতি সবরকম আলোচনা হত। এর সঙ্গে চলত যুক্তিতর্ক গল্প। লেগপুলও হত। তখন লক্ষ্য করেছি গণেশের কি অসাধারণ জ্ঞান! সবকিছুই ছিল ওর নখদর্পণে। ওর মধ্যে সব সময় পজিটিভ এনার্জি কাজ করতো। ভীষণ ঠাণ্ডা মাথার আর সমঝদার ছেলে ছিল। ওর মধ্যে আরো একটা সুন্দর গুন ছিল লোককে বোঝানো। হয়তো বন্ধুদের মধ্যে সিরিয়াস তর্কাতর্কি হচ্ছে ও কিন্তু ঠিক বুঝিয়ে থামিয়ে দিতো। একবার ফুলেশ্বরে আমরা পিকনিক করতে গেছি। আমি রান্না করছিলাম। হঠাৎ আবিষ্কার ওরা আমাকে রেখে সবাই নৌকা চাপতে গেছে। প্রচন্ড রেগে গিয়ে ফুলকপি আলুর তরকারিতে বেশি করে নুন আর লঙ্কার গুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। খেতে খেতে সবাই উঃ আঃ করছে। ব্যতিক্রম গণেশ। নিঃশব্দে  খেয়ে নিয়ে বলল পিকনিকে এসে নুন ঝাল একটু বেশি নাহলে মানায় না কি? এই ছিল গণেশ।
আমি একবার কোন কারণে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এমনকী বন্ধু-বান্ধবরা পর্যন্ত মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। যেন বিচারের কাঠগড়ায় আমি এক দাগী আসামী। অনেক বন্ধু তো কথা বলাই ছেড়ে দিয়েছিল। আমার সঙ্গে কথা বললে তারা খারাপ প্রতিপণ্ণ হবে। তার ছায়া তাদের দাম্পত্যজীবনে প্রভাব সৃষ্টি করবে। এক কথায় ওদের চোখে খারাপ মেয়ে বিবেচিত হয়েছিলাম। লজ্জায়, অপমানে,দুঃখে পঁয়ত্রিশ সূর্য়ের মুখ দেখিনি। কিন্তু গণেশ কোথাও থেকে আমার মানসিক অবস্থার খবর পেয়ে আমার কাছে এসেছিল। না, আমাকে সান্ত্বনা দেয়নি সেদিন। বলেছিল fight fight. তোর ভেতরে যে শক্তি আছে তাকে টেনে বের কর। কতদিন এভাবে নিজেকে লুকিয়ে রাখবি? কাদের জন্য রাখবি। তুই তো কোন অন্যায় করিসনি। অন্যায়ের শিকার হয়েছিস। তবে কেন নিজেকে গুটিয়ে রাখবি? জীবনের চলার পথে অনেক চড়াই-উৎরাই থাকবে।ঝড়-ঝাপটা আসবে। সেগুলোকে overcome করতে হবে। 
নারে গণেশ তোর মত করে কেউ বোঝায়নি। বরং তারা উপেক্ষা করেছে, অবজ্ঞা করেছে। তুই লিঙ্গবৈষম্যের উর্দ্ধে। তুইই প্রমাণ করেছিস বন্ধুর কোন লিঙ্গ হয়না। বন্ধু বন্ধুই। তোর সঙ্গে হয়তো দীর্ঘকাল দেখাসাক্ষাৎ নেই। কোন যোগাযোগও নেই। তবু তোকে miss করি। আগামী দিনগুলোতেও করব। এমন বন্ধু বিরল। পাওয়াও ভাগ্যের। যেখানে গেছিস ভাল থাকিস। আনন্দে থাকিস। 
আমাদের একটা গণসঙ্গীতের ট্রুপ ছিল। মলয়ই নাম দিয়েছিল কল্লোল। ওখানেও গণেশের উপস্থিতি ছিল ভীষণ রকম।
আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধন ছিল দৃঢ়। পুরুষ নারী কথাটা কক্ষনো মাথাতেই আসতো না। আমরা একসঙ্গে ঘুরেছি বেড়িয়েছি। তবু পরস্পর পরস্পরের প্রতি ছিল সমীহ। ইয়ার্কি রঙ্গরসিকতা সব হতো কিন্তু কখনই সেটা অশ্লীলতার পর্যায় পৌঁছয়নি। কেউ কখনো খারাপ কথাও উচ্চারণ করেনি। তবু বন্ধুত্ব ছিল মজবুত, মধুর।
তাইতো ভাবি গণেশ তোর জন্য আমি লেখনি ধরেছি তুই কি ওপর থেকে দেখতে পাচ্ছিস শুনতে পাচ্ছিস আমাদের মনের যন্ত্রণাগুলো?যে সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সম্পাদক ছিলি তুই, সেই তোর প্রিয় ইলশেগুঁড়িতে আজ তোর স্মরণ সভা হবে। তুই আসবি তো?
তোরা আসন খালি পড়ে আছে! কে করবে সেই পদ পূরণ? ভালো থাকিস। শান্তিতে থাকিস।


কবিতায় শ্রদ্ধার্ঘ্য: কবি সৃজন পাল

দীপক আঢ্য
সম্পাদক, বিবস্বান পত্রিকা


ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, man lives in deeds not in years’। ইলশেগুঁড়ি পত্রিকার সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ মলয়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় সেদিন যখন জানতে পারলাম ইলশেগুঁড়ি পত্রিকার আজন্মকালীন সহকর্মী সৃজন পালের চলে যাওয়ার খবর, সেদিন সেই মুহূর্তেই এই আপ্ত বাক্য মনে এসেছিল, কিছু মানুষ এই পৃথিবীতে আসেন, যাঁদের সরাসরি চেনার প্রয়োজন হয় না। ঠাকুর রামকৃষ্ণ-দেবের কথা অনুযায়ী তাঁরা ঠিক ‘দাগ রেখে’ যান। আর সেই দাগের পথ ধরে তাকালেই তাঁরা মূর্ত হন তাঁদের এই নশ্বর দেহ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেও। ঠিক এমনই এক মানুষ ছিলেন সৃজন পাল।
আমার কাছে কবি সৃজন পাল এই পরিচয়টুকুই যথেষ্ট। যখন তাঁর কবিতার শব্দ চয়নে আমি পড়ে ফেলি, “মানুষের আর্তনাদ, শরীরের বৃন্দগান / ফিরে যাবে মানুষের কাছে”(কবিতা ‘একখানা গান’) অথবা “বিষণ্ণতা ছাপিয়ে চেপে বসে ভয়? আর বাঁচার আর্তিতে গলা কাঁপে” (কবিতা ‘ছৌ নাচ), তখন যেন খলিল গিব্রানের কথাগুলোই মনে পড়ে, যেখানে তিনি লিখছেন, ‘He a man in the spring of life who/ foresaw fully that the peaceful hour / of freeing himself from the clutches / of life was fast nearing. He was awating Death’s visit greatfully, and upon his pale face appeared the dawn of hope’  আর সেই আশাবাদীতার স্বপ্ন নিয়ে কবি সৃজন বলতে পারেন, ‘ শুধু তোর জন্য বয়ঃসন্ধির স্বপ্ন নিয়ে হেঁটে যাচ্ছি, হেঁটে যাচ্ছি…/ শুধু তোর জন্য’ (কবিতা কলকাতা ২০১৮)।
সৃজন পালের কবিতারা তার স্ব-গুণেই চির অক্ষয়।  এক শাশ্বত রূপ ধরা পড়ে তাঁর ‘একখানা গান’ কবিতায় যখন তিনি লেখেন, ‘এইসব শোক, তাপ, উল্লাসের শব্দ, হুলুরব হরিধ্বনি-/ আসলে তো একখানা গান’ তখন কি পাঠক মাত্রই শুনতে পান না, চিলিয়ান কবি পাবলো নেরুদার কথা, যেখানে নেরুদা লিখছেন-- ‘Comes and shouts with no mouth/ with no tongue, with no throat/ nevertheless its steps can be heard’। আসলে realist কবি সৃজন পালের দর্শন এবং উপলব্ধি বোধের তীব্রতা এতই প্রখর যে তার কবিতার পাঠ পাঠককে ভাবতে বাধ্য করায় “জীবন তবুও যেন হয়েছে প্রগাঢ়” এমন জীবন-বোধ। আর সেই প্রগাঢ়তার কষ্টি পাথরে অক্ষুণ্ণ হয়ে থাকে তার কবিতা যাপন, ‘মাটি থেকে উঠে আসা শব্দগুলো মেখেছি শরীরে/ মাটিতেই ফিরে যাবে সব। / সমুদ্রের ঢেউ সমুদ্রে ফিরবে/ গাঙুরেই ফিরে যাবে গাঙ্গুরের গান। এবং তৎক্ষণাৎ যেন কোত্থেকে বোহেমিয়ান-অস্ট্রিয়ান কবি Rainer Maria Rilkeর কথাই শুনতে পাই-- We lack all knowledge of this parting. Death/ does not deal with us. We have no reason / to show death admiration, love or hate;/ his mask of feigned tragic lament gives us / a false impression.”  কবিতা (On Hearing Of A Death) এবং ভাবনা বিস্তার লাভ করে আরও আরও…। ঠিক সে সময় মনে হয় না, কোথাও যাননি কবি। কবি সৃজন পালরা কেবল এই নশ্বর দেহ ছেড়েই চলে যান, আর রেখে যান তাঁর দাগ শাশ্বত-রূপে।

গণেশ

কৌস্তুভ আচার্য্য


গণেশকে সেভাবে মনে করতে পারি না স্কুলের জীবনের সাথী হিসাবে। তাই হঠাৎ, ফেসবুকের কল্যাণে যখন ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটা মেসেজ পেলাম বাকসাড়া স্কুলের উল্লেখ করে —‘‘আমাকে চিনতে পারছ?’’, লজ্জা পেয়েছিলাম সেদিন।
ও আর আমি একই ক্লাসের একই বিভাগে পড়তাম।
২০১০ এর পর ভাল যোগাযোগ ছিল।
একবার সেক্টর ফাইভে দু’জনে দেখা করে অনেক স্মৃতিচারণ করেছিলাম।
‘‘উচ্ছ্বাস’’ গ্রুপে ওই আমাকে নিয়ে এসেছে ২০১৭ এর জুলাইতে।

অল্প সময়ের এই পুনর্মিলন, কিন্তু খুব কাছের মনে হত। একটা স্বভাবজাত সারল্য বজায় রেখেছিল। তাই বোধহয় আজ যখন ওর এই হঠাৎ চলে যাওয়ার কথা শুনলাম, আবেগ ধরে রাখতে পারলাম না, ছল ছল চোখে, একাকি বসে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিদায় জানাতে হল, কিন্তু জানি যেরকম স্কুল জীবনের পর প্রায় ৩১ বছর পর আবার দেখা হল, সেরকম আবার দেখা হবে অন্য-লোকে বহু বছর পর। জানি ওই আবার খুঁজে বের করবে আমায়।

সৃজন

দিলীপ পাল
সম্পাদক, শব্দসেনা পত্রিকা


এ সুন্দর এক প্রকৃতির মাঝে
তুমি চলেছো অরুণ মেঘমালা
জীবন ছুঁয়ে থাকে ঘরের বেড়া
ভোরের আলো মেলে পূবের থালা।

জীবন বৃত্তের পরিধি ছোট হলেও তার বিস্তৃত পরিসর অনেক বড় হতে পারে। কর্ম অনুভূতি মানবিকতায় বেঁচে থাকে মানুষ স্বর সুরে। সৃষ্টি সৃজনশীল সংস্কৃতি পাখা মেলে ধরে। তাঁরা বারবার ফিরে আসেন। এমনই এক মানুষ সৃজন পালকে ও তাঁর পরিবারকে শ্রদ্ধা। সমবেদনায় থাকুক আমাদের অন্তর জুড়ে।  

যদি আর একটু আগে পৌঁছাতে পারতাম!

আমিমোন ইসলাম 


পয়লা নভেম্বর আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন সৃজন দা। আর আমি আজ জানতে পারছি!
এইতো কদিন আগেই দেখা হল বর্ধমান মেলায়, সৃজনদার সাথে। সেই প্রথম দেখা। আর তখনও কি জানতাম ওটাই শেষ দেখা! প্রথম আলাপেই ওনার দুটো কবিতার বই ‘মেঘের মুলুক’ আর ‘রাইকদম’ আমাকে দেন মলয়দা। আলাপ করিয়ে দিলেন ইলশেগুঁড়ির সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ মলয়দার সাথে। তার পর আর দেখা হয়নি সৃজনদার সাথে। ফোনে কথা হয়েছে, গল্প হয়েছে, তর্ক হয়েছে। 
কলকাতা বইমেলায় আমি পৌঁছে, ইলশেগুঁড়ি’র স্টলে গিয়ে দাঁড়াতেই মলয়দা বললেন — “এইমাত্র সৃজন বেরিয়ে গেল, তুমি আর একটু আগে এলে দেখা হয়ে যেত!”  
ইস! যদি আর একটু আগে পৌঁছাতে পারতাম!

শান্তি পাও চিরনিদ্রালোকে

অমলেন্দু কর্মকার


দূর হতে দেখেছিনু তবে
কখনো ভাবিনি কিন্তু পলাতক রূপে
এভাবেও তুমি চলে যাবে ... 
অকস্মাৎ! অতি সঙ্গোপনে;
নির্মম নিষ্ঠুর মৃত্যু
অপ্রিয় আকুল বার্তা আনে...
নিদ্রাহীনে নিদ্রা দিলো বিধি।
আপামর শুভাকাঙ্ক্ষী শোকস্তব্ধ থাকে নিরবধি,
আকাশের মুখ যেন ভার , 
ইলশেগুঁড়ি হারালো বাহার...
কাব্যলক্ষ্মী মুহ্যমান শোকে
শান্তিতে ঘুমাও বন্ধু, শান্তি পাও চিরনিদ্রালোকে।

সময়ের মাদল 

প্রদীপকুমার পাল 


ঘন্টা বাজতে-বাজতে কেটে যায় দিন ...
সকাল থেকে সাঁঝ। 
শেষ ঠিকানা লেখা আছে এই দুয়ারেই, 
নেই এখানে কোনও কাল কিংবা আজ। 

সময় পোড়াচ্ছে দিনগুলি, 
যে-ভাবে আগুনে মন পোড়ে ...
বদলে বদলে যায় মুখের আদল, 
বাতাসে-বাতাসে শুধু পোড়া ছাই ওড়ে। 

ঝড়ের সুতোয় ওড়ে মাদলের তালে বোনা গান, 
ফাগুনের আগুনেও সময়ের কানামাছি খেলা ...
একটা ঝড় দাও হে মহাকাল, 
তুমি তো ছান্দসিক
উড়ে যাবো প্রিয় ঠিকানায় ...
যেখানে রোজই থাকে দরোজাটা খোলা।

সৃজনের শর্তই রোপন নতুন

দেবব্রত ঘোষ মলয়


শুণ্য আকাশটা গ্রাস করে শূন্যতা
একে একে তারা খসে পড়ে ...
খুলে যায় পাঁজরের হাড়
দিনের আলোয় আজ গভীর আঁধার এক .. 

গভীর আঁধার এক ধু ধু মরুভূমি
পৃথিবী এখন কাঁদে গভীর অসুখে
তোমাদের অনুযোগ বেরোতে পারিনি
ছায়ার গণ্ডী কালো বন্দী আমাকে।

বন্দী আমাকে এসো, মুক্ত কর
এই তাপ, এই শোক, কান্নার নদী
সৃজনের শর্তই রোপন নতুন
ধ্বংসের শর্তই সৃষ্টি আবার।

সৃষ্টি আবার এসো ভুলে সব ক্ষত
উঠে বোস, মুছে ফেল কান্নার রেশ
আমরা ফিনিক্স পাখি ধ্বংসের  শেষে
ডানা ঝাপটাই ফের ছাইয়ের স্তূপে

শুধু শুকনো জলের দাগ ছাপ রেখে যায় ...

সৃজনের কবিতা 

( ইলশেগুঁড়ির বিভিন্ন সংখ্যায় প্রকাশিত) 



একখানা গান


মাটি থেকে উঠে আসা শব্দগুলো মেখেছি শরীরে
মাটিতেই ফিরে যাবে সব।

সমুদ্রের ঢেউ সমুদ্রে ফিরবে
গাঙুরেই ফিরে যাবে গাঙুরের গান,

মানুষের আর্তনাদ, শরীরের বৃন্দগান
ফিরে যাবে মানুষের কাছে।

এইসব শোক, তাপ, উল্লাসের শব্দ, হুলুরব, হরিধ্বনি -
আসলে তা একখানা গান।

বৃষ্টিকথা


কিছু গেছে হাওয়ায় হাওয়ায়
কিছু গেছে জলে
কিছু তার মেঘ ছুঁয়ে 
বৃষ্টিকথা হলো
কিছু আজও রয়ে গেছে 
শুকনো করতলে
আপাতত পুঁজি এই
দৃষ্টি এলোমেলো

আনমনা হারালো কিছু 
ডাইনে ও বাঁয়ে
কিছু গেল দিয়ে থুয়ে
সাংসারিক ব্রতে
কিছু আজও জড়ায়
তবু রোগা দুটো পায়ে
এভাবেই বৃষ্টিকথা
মিশে যাবে স্রোতে।

জলরেখা 


জলরেখা প্রমান
তুমি ছিলে ঘোর নদীমাতৃক,
এ মীমাংসার শেষে উপগ্রহ চিত্রে উঠে এল ঐতিহাসিক জাহাজ, 
শক্ত চোয়াল, চায়ের কাপ আর ছাইদানি।
সে বাবদে কিছু উজান কথা অবিস্মরণীয়।

তুমি শুধু ভুলে গেছ পূর্বাশ্রম নাম,
তাতা থৈ দিবস রজনী।

কলকাতা - ২০১৭


মাস্তুলে লুঠে নিচ্ছ চাঁদ আর তার সমগ্র অশ্বশক্তি -

ইশারায় আমন্ত্রণ, প্রতিশ্রুতিও ছিল বাঁচার আস্বাদ
তোমার আকাশ জুড়ে এক হাঁটু ধুলোমাখা চাঁদ।

মেচেদা লোকাল থেকে নেমে আসে চাঁদ
বাবুঘাট থেকে হাঁটাপথ, 
ক্যাসুরিনা অ্যভিনিউ দারুণ অবাধ

আজ তাই ভাটি গাঙ ছেড়ে তোমার উজানে
চাঁদের গায়ে চাঁদ লাগে পার্কস্ট্রিট জংশনে

ওদিকে হৃদয়পুরে পথ অবরোধ
সব কিছু ভাসিয়ে দাও, মরা চাঁদ এমনই অবোধ।


কলকাতা : ২০১৮ 


ক্ষয়াটে শরীর দেব তোকে।
কানাগলির ভিতর এফোঁড়, ওফোঁড় উড়াল মায়ায় — ফ্লাইওভারে ছড়িয়ে দেব আমার খিদে, মনখারাপ করা বিকেল আর নিষিদ্ধ অনুভূতি।
ধুলো ধোঁওয়া সাঁতরে বুক ভরে টেনে নেব বেওয়ারিশ লাশের গন্ধ।

লোহা, টিনা, ভাঙা প্লাসটিকের ভেতর, পলিব্যাগ আর গ্লোসাইন বিপ্লবের নির্মীয়মান উপনগরীর অন্ধ স্কুলে চক্ষুসমান হতে পারছিনা তাই ক্ষমাসুন্দর 
খুদকুঁড়ো বরাদ্দে আবার মিছিলে তোর জন্য।

শুধু তোর জন্য বয়ঃসন্ধির স্বপ্ন নিয়ে হেঁটে যাচ্ছি, হেঁটে যাচ্ছি  ...
শুধু তোর জন্য।


বিবাহবার্ষিকী


রাত ফুরোলেই আর একটা দিন
একইরকম বাদুড় ঝোলা
উট পাখি বা উটের মতো
প্রতিটা দিন যেমনটা হয়
দুই দুগুণে চার এর মতো
নাক বরাবর ডাইনে বাঁয়ে
প্রয়োজনে আলতো ছোটা
ঠিক তেমনই রাত ফুরোলেই
ধুলো ধোঁওয়া ঘাম ঘামাচির
আর একটা দিন অন্যরকম ।

হঠাৎ হাওয়ায় ভেসে আসা
কোথায় যেন একটুখানি
বিসমিল্লাহ, সাগর সেন আর 
দেবব্রতর টুকরো কলি
অন্যরকম একখানা রাত।

রাত ফুরোলেই আর একটা দিন।

উৎসব


ও পাড়ার আলো শুষে
এ পাড়ায় অবাক দেওয়ালি।

আর আমাদের রামধনু চোর 
ও পাড়ায় গিয়ে রাধা নাচায়-
গলার শিরা ফুলে ওঠে
হোলি হ্যায়.... হোলি হ্যায়

আমি তাই উল্লাসে আছি,
ভুল নয় যদি কোন লাশ ভেসে আসে।
লাশ তো ভাসেই উল্লাসও ভীষণ জরুরি।

হেনরি ওলোঙ্গার গান


হাতে ছিল সাদা বল
হয়ে গেল হাওয়াই গিটার।

এক টুকরো কালো কাপড়
ম্যাজিকের মত বদলে দিল গল্পটা।
কাপড়টার রং যদি লাল বা নীল, 
সাদা কিংবা মেরুন হতো
তবে ঘাতকের কাজ কমতো
আর আগামী সিরিজে 
প্যাভিলিয়ন এন্ড থেকে আবারও
শুরু হতো পুরোনো দৌড়।

আর কি ম্যাজিক 
হাতে ছিল সাদা বল হয়ে গেল হাওয়াই গিটার।
বল হাতে 
আর কখনো ভয় দেখাব না তোমাদের।
শুধু গান গাইবো।


ছৌ নাচ


মুখ নয় মুখোশগুলো থাক।
লাফাও ঝাঁপাও
হাততালি দিয়ে উল্লাস জানাই।

মুখগুলো বেরিয়ে এলে বুকে ঘাম জমে।
বিষণ্নতা ছাপিয়ে চেপে বসে ভয়
আর বাঁচার অর্তিতে গলা কাঁপে,
মুখ নয় মুখোশগুলো থাক। 

এত যে তারিফ করি সে তোমার মুখোশের লোভে,
কখনো আবার যদি ফিরে আসে মুখোশের দিন।
মুখ নয়
চুমো দেব মুখোশের কপালে, চিবুকে।

মুখগুলো বেরিয়ে এলে ভয় পাই।


মাঝ রাত্তিরে

  
মাঝ রাত্তিরে অবনীদের পাড়া জুড়ে
কড়া নাড়ার শব্দ।
খুট খুট......
                খস খস.......
                                   ফিস ফিস.......
উচ্চকিত ঘোলাটে বাল্ব এবাড়ি ওবাড়ি।

ঘেমে ওঠে কেউ, একটু বেসামাল।
আয়না সাক্ষী চোয়াল ঝুলে পড়ল কিনা।
সব ঠিক ঠিক মনে হলে 
স্বগত হাসিতে রসিকতা নিজস্ব ঘরানায়।

এর পর হাতে উঠে আসে জলের গ্লাস  আর
নিয়ম মেনে বাথরুম পর্ব শেষে
ঘোলাটে বাল্ব মাথা রাখে ক্ষয়াটে বালিশে। 

ঘুমিয়ে পড়ে কেউ।
কেউ কেউ জ্বালিয়ে রাখে 
তীক্ষ্ণ ফিলামেন্ট ভোর ছুঁয়ে।

শ্মশানের গান 


আজকে আবার সমাগত দুর্দিন
কারা যেন সব নিভিয়ে দিচ্ছে আলো।
বর্বরতার পতাকাও জোর উড্ডীন
আকাশের মুখ ঢেকেছে নিকষ কালো।

আজকের এই নিশাচর উৎসবে
কথা নেই, শুধু ভয়ে ভয়ে ফিসফিস —
উদ্বোধনের গান শেষ হল তবে
বিসর্জনে অর্জন শুধু বিষ।

জানি আজ তুমি মুখোশে ঢাকছো মুখ
চুপি চুপি আজ গরলেই দিলে মন
বিষে যে এমন নিহিত দেদার সুখ
মাতাল হওয়ার এই তো শুভক্ষন।

মাতাল যখন খোঁয়ারিই দেখো তবে
স্বপ্নেরা যাক অনন্ত ভাসানে
স্বপ্ন সত্য হয়েছে কোথায়, কবে?
ঘর যে বেঁধেছি জায়মান শ্মশানে। 

সৃজনের ছোটদের ছড়া 

মেঘনাদ মাইতি


সাদা মেঘ এসে বলে
কালো মেঘ ভাইটি —
চল যাই উড়ে উড়ে 
তাহিতি বা হাইতি!

তারপর ভেসে ভেসে 
চেরাপুঞ্জিতে এসে
সা - রে - গা - মা - পা - ধা - নি - সা —
মারল তেহাইটি।

বলি তবে কানে কানে
এ বিষয়ে ভাল জানে
মেঘবিশারদ 
শ্রী মেঘনাদ মাইতি।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া 


পারমিতা মুখার্জী 
এখনও তো মেনে নিতে পারছি না। whatsapp স্ট্যাটাস এ এখনো দেখাচ্ছে last seen 11.25 a.m - আর সত্যিই নেওয়া যাচ্ছে না। পরশু আমার সঙ্গে কথা হলো। আমার মেয়েকে কিছুতেই সামলাতে পারছি না। 
আর কত কত দুঃখ পেতে হবে জানিনা। যারা চলে যায়, তারা এর উর্দ্ধে উঠে যায়। আমরা যারা থেকে যাই তাদের এই দুঃখ পাহাড় ক্রমাগত ঠেলে যেতেই হয়। এটাই চরম সত্য। 
গণেশদার উৎসাহে যা শুরু করেছিলেন, সেটা থামাবেন না মলয়দা। 

অর্পিতা সরকার মণিগ্রাম 
কি বলব - অ্যাক্সিডেন্ট!!!! বোধহয় তাই। নয়ত কাল বিকেল পাঁচটায় Whatsapp খুলে এমন সংবাদ পাবার কথা ছিল না। মানুষটার সাথে আমার আলাপ খুব কম হলেও মলয়দার সূত্রে অনেক অনেকটাই চেনার সুযোগ আমার হয়েছিল আর সেটাই স্বাভাবিক, কারণ এমন বন্ধুত্ব সত্যিই বিরল। আমি যতটুকু জানি বা অনুভব করি তাতে মলয়দা, দেবাশীষদা, গণেশদা - ত্রয়ী বলেই পরিচিত আমার কাছে। কালও বার বার সে কথাই মনে হচ্ছিল। মলয়দার সাথে একদিনও এমন কথা হয়নি আমার যেখানে দেবাশীষদা বা গণেশদা উপস্থিত ছিলেন না। ছোটবেলা থেকে বড়বেলার কত স্মৃতি উঠে আসছে তাই আমার মনে হয় এই মানুষ দুজন শুধু শারিরীক ভাবেই লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেলেন, হয়ত একটু তাড়াতাড়ি বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল, হয়ত। কিন্তু আমি জানি আবার যেদিন মলয়দার সাথে কথা হবে যতবার হবে ততবারই আমার দেবাশীষদা আর গণেশদা দুজনের সাথেই দেখা হবে, আর ঠিক এখানেই বোধহয় মানবজীবনের সার্থকতা। এই মানুষগুলোর সৃষ্টি আজীবন আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবে মানুষগুলোর মতই। আমি জানি না পরপার বলে কিছু আছে কিনা, হয়ত আছে হয়ত .. ওনাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি, ভাল থাকুন ওনারা, চিরকাল, প্রিয়জনের মনে।
প্রসঙ্গত আমি কোন একজনের কথা আলাদা করে বলতে পারলাম না, ওনারা এমনই অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত যে আলাদা করা সম্ভব নয় আমার কাছে, মার্জনা করবেন।

অরূপ মণিগ্রাম
এইমাত্র খবরটা পেলাম। স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। হায় ভগবান কি সব হয়ে যাচ্ছে। সৃজন দা এবং ওনার পরিবারকে আমি খুব ভালোভাবে চিনি। ওনাদের সাথে আমার পরিচয়ও আছে। ওনার পরিবারকে সমবেদনা জানাবার ভাষা আমার নেই। 

প্রদীপ কুমার পাল
২০২০ সব শেষ করে দিয়ে যাবে। খুব মন খারাপ লাগছে। কিছু ভাল লাগছে না। সৃজনদার সাথে আলাপ না থাকলেও মনে হয়েছিল আমারই এক দাদা উনি। 

আর্যতীর্থ
স্বজনবিয়োগের কোনো সান্ত্বনা হয়না। স্মৃতিরা অটুট থাক।

অর্ণব গড়াই
আত্মার শান্তি কামনা করি ...

সৌরভ মজুমদার
সত্যি দাদা ফাঁকি দিয়ে গেলে
পথটা যে দেখা ছিল অনেকখানি বাকি
যাবার তাড়া যদি ছিল তোমার
কেন ফেলে গেলে তোমার সৃষ্টি
তোমার আঁকি ঝুকি
ভাবছো তুমি — পড়তে পড়তে
হারিয়ে যাব সুদূর সীমানায়
কিন্তু দাদা হারিয়ে গেলেও
ফিরতে যে হবে আমায়
সেই পথটা যে বলে গেলে না।
সত্যি বলতে যে কটা দিন
তোমার সাথে কথা, তোমার সাথে আলাপ
বারবার যে মনে পড়ে যাচ্ছে
সত্যি এইটাই কি পাওয়ার ছিল
ভাবের প্রকাশ আজ অস্তমিত
তবুও বেঁচে যেটুকু শ্রদ্ধা
যেখানেই থাকো দেখা হবে আবার
শান্তিতে থেকো
ভালো থেকো দাদা। 

সমর মিত্র
প্রয়াত কবির বিদেহী আত্মার উদ্দেশে শ্রদ্ধা। শোকস্তব্ধ ইলশেগুঁড়ি পরিবারের প্রতি সমবেদনা।

মানস মিত্র
আমার সাথে দীর্ঘদিনের (38 yrs.) বন্ধুত্ব সেই কলেজ জীবন থেকে...ভাবতেই পারছি না, ওর এইভাবে চলে যাওয়া... ওর পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না... দীর্ঘদিন ওর সাথে বিভিন্ন অফিসে, এমনকি বিদেশেও কাজ করার অভিজ্ঞতা যা ভোলার নয়...ওর মত বন্ধুকে হারিয়ে আমি এবং আমরা সবাই ভীষন মর্মাহত, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাচ্ছে না...যেখানেই থাকিস খুব ভালো থাকিস বন্ধু এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই...ওর আত্মার চিরশান্তি কামনা করি...ভাল থাকিস বন্ধু...অনেক অনেক স্মৃতি মনে পড়লেও আর কিছুই লিখতে ভালো লাগছে না..মনটা বিষণ্ণ ও ভারাক্রান্ত...

ছবি ব্যানার্জ্জী
এইমাত্র খবরটা পেলাম আমাদের আর এক ভাই গণেশ আর নেই। ঈশ্বর এত নিষ্ঠর কেন? অভিশপ্ত এই ২০২০ আর কত দুঃসংবাদ দেবে জানিনা। এরপর কি দেখতে হবে কে জানে? দূরে থাকলেও ওদের ছোটবেলা থেকে আমার চেনা। খুব খারাপ লাগছে। এটা কিছুতেই মন মেনে নিতে পারছে না। 

মিঠু দত্ত
কি হয়েছিল ওনার? ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি।

রঞ্জন মজুমদার 
আমার ভাল বন্ধু ছিল।

সত্যব্রত ঘোষ
খুব কাছের বন্ধু টা চলে গেল। শুধু বন্ধু কেন, ও আমার জীবনের অনেকটাই জুড়ে রয়েছে। আমার জীবনকে সঠিক পথে চালিত করার জন্যে ওর অবদান জীবনে ভোলা যাবে না। যেখানেই থাকুক শান্তিতে থাকুক।
আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। কিছুতেই না। দেবা, গণেশ এই নাম গুলো ছোটবেলা থেকে জড়িয়ে ছিল। অভিশপ্ত ২০২০ আর কত দুঃসংবাদ দেবে বুঝতে পারছি না।
একটা সময় কোনো চাকরি না পেয়ে যখন প্রতিটা রাত কাটতো অনিদ্রায়, টেনশন-এ, মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম, ঠিক সেই সময় আমার পরিবারের লোকেদের পাশাপাশি এই বন্ধুটিও এসে হাত ধরে। ভরসা দেয় নতুন ভাবে বাঁচার জন্য। ওর দেখানো পথে চলতে শুরু করলাম। আজ আমি যতটুকু হতে পেরেছি তার জন্যে এই বন্ধুটির অবদান সারা জীবন মনে থাকবে।
ও এরকমই। সবার জন্য ভাবতে জানে। আপসোস হচ্ছে, একটু যদি নিজের জন্য ভাবতো হয়তো এই দিনটা এত তাড়াতাড়ি দেখতে হতো না।

স্বপন পাল
আমি শোকাহত, দুঃখিত। 

প্রান্তিক কুমার ঘোষ
২০২০ তে এত মর্মান্তিক ও খারাপ খবর পাচ্ছি তাতে বোঝা যায় না যে ভবিষ্যতে আরো কত অপেক্ষা করে আছে। ছোট থেকেই গণেশ কাকাকে চিনি কাকাদের ও পারিবারিক বন্ধু হিসাবে, ওনার প্রতি অনেক শ্রদ্ধা জানাই। 

পল্লব ব্যানার্জী  
খুব বেদনাদায়ক। চিকিৎসার কোন সুযোগই পেল না। স্কুল লাইফের অনেক স্মৃতি মনে পড়ছে। খুব শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল গণেশ, অত্যন্ত মৃদুভাষী, কখনো জোর গলায় কথা বলত না। আজকে গণেশের জন্য এই লেখাটা লিখতে হবে কখনো ভাবিনি। ভাল থাকিস বন্ধু। 

শঙ্কর ছেত্রী 
দেবা, গণেশ একে একে চলে গেল মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে। তরতাজা প্রাণগুলো একে একে চলে যাচ্ছে। অভিশপ্ত কুড়ি বিদায় নিলে বাঁচি। মাধবী আর সংহিতার জন্য রইল আমার সমবেদনা। দুঃসংবাদটা ভীষন মর্মভেদী। 

সোমা টিঙ্কু দত্ত
কি বলছ! কি হয়েছিল গণেশদার? এ তো ভাবাই যাচ্ছে না। বিট্টুর বিয়েতে দেখা হয়েছিল। খুব খারাপ লাগছে খবরটা শুনে। ওনার বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।।

মৃত্তিকা দে

সত্যিই অত্যন্ত মজার ও ভালো মানুষ ছিলেন ......আজকের এই খবরটা একদমই অপ্রত্যাশিত ছিল আমাদের সবার কাছে .....যদিও এই মানুষটার সান্নিধ্য অনেক কমই পেয়েছি ......কিন্তু যতটুকু পেয়েছি সেইটাই স্মরণীয় হয়ে থাকবে .......যেখানেই থাকুন না কেন ভালো থাকুন এই প্রার্থনা করি ...

সুবোধ পাণ্ডে 
সত্য বড় কঠিন! শ্র্দ্ধা জানাই।

প্রিয়েতা ছেত্রী
দুঃখ প্রকাশের ভাষা নেই। একবার আলাপ হয়েছিল কাজলদার বাড়িতে। চির শান্তির দেশে ভালো থাকুন সৃজনদা। 

মিঠু দত্ত 
কিছু বলার নেই। so sad ...

আশিষ পাল
গণেশ মারা গেছে। কি হয়ে ছিল। খবর পেলাম না। 

সুব্রত সরকার
এটা কি খবর, এক এক করে সবাই চলে যাচ্ছে। 

দেবাশীষ মুখার্জী
এই সময় কি বলব কোন অসুখ তো ছিল না ফলে মেনে নিতে পারছি না

অরূপ মুখার্জী 
মনটা খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল 

সুদীপ সরকার (বকুল)
ছি ছি। উচ্ছাস নামটা ওরই দেওয়া। 
Deep condolences to the bereaved family. May his pious soul enjoy eternal peace in heaven. 

জয়ন্ত 
খুব দুঃখজনক ঘটনা। আমি মর্মাহত ও ভয়ার্ত। আমি ওর আত্মার শান্তি কামনা করি ও পরিবারের সকলকে সমবেদনা জানাচ্ছি। 

সুমিতা হাজরা
এতো আকস্মিক চলে গেলেন , এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা, ওনার পরিবারের পরিজনের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি

সন্দীপন ব্যানার্জী
খুব খারাপ খবর।

দুর্গাদাস মিদ্যা
আর পারা যাচ্ছে না

দেবাশিস দত্ত
সমবেদনা জানানোর ভাষা নেই। - 

অমিতাভ দাস 
শ্রদ্ধা জানাই।  

অমলেন্দু কর্মকার 
ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি

প্রশান্ত মণ্ডল 
এখনো বিশ্বাস করা কঠিন মনে হচ্ছে যে গণেশদা আর নেই। ওনার মতো সৎ, আন্তরিক, সাংস্কৃতিক মানুষ আজ বিরল। ভাবতেই ভালো লাগছে না যে ওনার সাথে আর কোনোদিন দেখা হবে না।

অভিজিৎ রক্ষিত 
ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি

দিলীপ পাল 
অকাল প্রয়াণ শোক জ্ঞাপন। শ্রদ্ধা

ধীরেন্দ্রনাথ মুখার্জী 
সৃজনবাবুর আত্মার শান্তি হোক,
তাঁর স্মৃতি মনের মধ্যে দীর্ঘ জীবিত হোক।

দীননাথ সাহা 
খুব দুখের... সৃজনবাবুর আত্মার চির শান্তি কামনা করি।

সুখেন সরকার
বড় তাড়াতাড়ি চলে গেলি।

সুধাংশু রঞ্জন সাহা
মর্মান্তিক। শ্রদ্ধা জানাই ।

ফটিক চৌধুরী
গভীর মর্মাহত।

প্রসেনজিৎ চৌধুরী
খুব খারাপ খবর গণেশদা নেই। গণেশদার আত্মার শান্তি কামনা করি।

প্রশান্ত মণ্ডল 
একি শুনলাম। ভাষা নেই কিছু বলার। খুবই বেদনার।

অনুপম ভট্টাচার্য
শ্রদ্ধা জানাই।

স্বপ্না রয়
পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করি। বিষন্ন হলাম।

শুভ্রনীল দাস
শ্রদ্ধা জানাই

অনুপম বন্দ্যোপাধ্যায়
শ্রদ্ধা জানাই।

সমীরণ সরকার
শ্রদ্ধা জানাই

সুশোভন রায়চৌধুরী
তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই।

রাজীব নাগ
শ্রদ্ধা জানাই। গণেশদা সত্যি ব্যাতিক্রমী মানুষ ছিলেন।

দীপক সাহা
খুব খারাপ খবর! তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি

গৌতম আচার্য
ওনার বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।

রাজীব নাগ
শ্রদ্ধা জানাই। গণেশ দা সত্যি ব্যাতিক্রমী মানুষ ছিলেন। 

ছন্দা শীল
একটু শরীরের প্রতি যত্ন নিলে আমরা সৃজন পালের মনের তৃপ্তি লাগা কবিতা থেকে বঞ্চিত হতাম না। ওনাকে আকস্মিক ভাবে হারিয়ে খুবই ব্যথিত। সৃষ্টিশীল আত্মাকে আমার প্রণাম জানাই। 

বিশ্বজিৎ ব্যানার্জী
খবরটা শুনে বিশ্বাস করতে পারছি না। ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি।

উর্মি পাল
পালবাবু মানতে পারছি না। জীবনের নতুন দিশা পেয়েছিলাম। নিজের দাদার চেয়েও প্রিয়। 

অভিজিৎ চক্রবর্তী
সত্যি, ভাল লোকগুলো খুব তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছে।

সৌরেন চ্যাটার্জী
শনিবার ও আমাকে WhatsApp-এ মেসেজ পাঠিয়েছে। ভাবতেই পারছি না, হাসতে হাসতে চলে গেল।

অর্ণব ঘোষ
ভাবতেই পারছি না ... খালি মনে পড়ছে, শেষ যে দিন অফিসে ওনার সাথে কথা বললাম সে দিনের কথা, তার দুদিন বাদেই লকডাউন ... আর আজ এই খবর।

ছন্দা শীল
একটু শরীরের প্রতি যত্ন নিলে আমরা সৃজন পালের মনের তৃপ্তি লাগা কবিতা থেকে বঞ্চিত হতাম না। ওনাকে আকস্মিকভাবে হারিয়ে খুবই ব্যথিত। সৃষ্টিশীল আত্মাকে আমার প্রণাম জানাই।

শমীক ঘোষ - খুব তাড়াতাড়ি চলে গেল।

বিপ্লব দাস - সত্যি বলার মত কোন ভাষা নেই। RIP...

উৎপল অধিকারী - RIP

দিলীপ বিশ্বাস - RIP Ganesh Da

পল্লব মিত্র - RIP গণেশ দা।

দেবব্রত সুরাল - Very Sad news. RIP

সৌম্য ঠাকুরতা - Very sad news for us.

Uttam Mukherjee
Extremely shocking...can’t forget those enjoyable & valuable moments & memories passed with him. Full of joy & very much admirable...valo lagche na...will miss you Dada...Jekhanei theko valo theko. 

Amal Sinha
I worked w/Ganesh da in 2008 for few months. In that brief time he left a long lasting impression..
Ganesh da, u will be missed

Debabrata Sural 
RIP 

Bimal Pal
Palbabu khub taratari chole gele sabaike kasta diye.Tomar atmar chira santi kamana kori.

Sujay Santra 
Rest in Peace

Soumitro Ghosh 
So sad unbelievable

Vipul Vyas
ईश्वर उनकी आत्मा को शांति प्रदान करें और उनके परिवार को यह दुख सहन करने की शक्ति प्रदान करें, ॐ शांति ॐ









মাসিক ইলশেগুঁড়ি ই-পত্রিকায় লেখা পাঠাবার নিয়মাবলী

  • সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক অপ্রকাশিত মৌলিক লেখা পাঠাতে পারেন।
  • কোন লেখার ক্ষেত্রে শব্দসংখ্যার বাঁধন নেই তবে মহাভারত পাঠাবেন না।
  • লেখা শুধুমাত্র বাংলা ইউনিকোড ফন্টে টাইপ করে পাঠাতে হবে।
  • নিজের একটা ছবি দেবেন অ্যাটাচ ফাইল হিসাবে।
  • ঠিকানা ও যোগাযোগের নম্বর থাকা জরুরি।
  • বইয়ের আলোচনা পাঠানো যাবে তবে সঙ্গে দিতে হবে বইটির প্রচ্ছদের ছবি।
  • প্রত্যেকের লেখার আলাদা করে প্রাপ্তি স্বীকার করা হয় না। 
  • লেখা যে কোন সংখ্যায় প্রকাশিত হতে পারে।
  • আমাদের ফেসবুক পেজে বা ওয়েবসাইটে প্রতি মাসে সম্পূর্ণ সূচিপত্র দেওয়া হবে।
  • প্রত্যেককে তাঁর নিজের লেখার লিংক আলাদা আলাদা ভাবে পাঠানো সম্ভব হয় না।
  • পত্রিকা প্রকাশের অব্যবহিত পরেই প্রত্যেক লেখককে পত্রিকার লিঙ্ক পাঠানো হয়।
 প্রয়োজনে ৯৩৩১২৭১৮২৫ ম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ করুন বা
ই-মেইল করুন ilseguripatrika@gmail.com
আমাদের ওয়েবসাইট অনুসরণ করুন:- https://ilseguripatrika. blogspot.com/
আমাদের ফেসবুক পেজ :- https:://www.facebook.com//ilseguripatrika

ইলশেগুঁড়ি থেকে প্রথম কবিতা সঙ্কলন সাজির সাফল্যের মুকুটে 
আরো একটি পালক যুক্ত করল আনন্দবাজার পত্রিকার এই রিভিউ

ইলশেগুঁড়ি প্রকাশনের প্রথম কবিতা 
সংকলন সাজি এখন পাওয়া যাচ্ছে।


প্রকাশের পথে গোয়েন্দা উপন্যাস

 

প্রিয় পাঠক, আপনার মতামত আমাদের কাছে মূল্যবান।

ilseguripatrika@gmail.com




                               








No comments

Theme images by luoman. Powered by Blogger.