Header Ads

Header ADS

ই ইলশেগুঁড়ি ৬




 





সিদ্ধান্ত হয়েছিল ঠিক এক বছর আগে গত বছর মার্চ মাসে, যখন সমগ্র পৃথিবীতে মানবসমাজে আচমকাই নেমে এসেছিল এক ভয়াবহ বিপর্যয়, মারণ ভাইরাস করোনার করাল আক্রমণ। স্তব্ধ হয়েছিল সব কর্মকাণ্ড, গৃহবন্দী হতে বাধ্য হয়েছিলাম আমরা। তখনই, সেই অভূতপূর্ব র্বন্দিদশায়, প্রযুক্তির হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরেছিলাম আমরা। শুরু হয়েছিল ইলশেগুঁড়ি-র অনলাইন যাত্রা "ই-ইলশেগুঁড়ি"।
আজ পুরোটা না হলেও অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছি আমরা। মুদ্রিত ইলশেগুঁড়ি-র দুটি সংখ্যা ইতিমধ্যেই আলোর মুখ দেখেছে। কাজ চলছে নববর্ষ সংখ্যার। এর মাঝেই প্রিয় পাঠকদের হাতে তুলে দিলাম ষষ্ঠ সংখ্যা ই-ইলশেগুঁড়ি। পাঠকদের ভাল লাগলেই তৃপ্তি পাবো আমরা।
ধন্যবাদ সবাইকে ইলশেগুঁড়ির পাশে থাকার জন্য। শুভমস্তু ...

                                                                                                               দেবব্রত ঘোষ মলয়




শিল্পী চিন্ময় মণ্ডলের সঙ্গে কিছুক্ষণ 

সুবোধ পাণ্ডে 




শিল্পী চিন্ময় মণ্ডলের শিল্পের প্রতি ভালবাসা জন্মেছিল সেই স্কুল বয়স থাকতেই। ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া ঝাউডাঙা গ্রামের ছোট্ট কিশোরটি ছবি আঁকত স্কুল পাঠ্যের বই দেখে দেখে। অক্ষরের জমির মাঝখানে যেন ইলাস্ট্রেশনের জাদু সরোবর! বিভোর থাকত সেইসব ছবি দেখে।


    

স্কুলের আশপাশের পরিবেশ জুড়েও যেন ছিল প্রকৃতির অপার আশীর্বাদ! নিজের গ্রামখানার গাছগাছালির মায়াবী রূপ এর সঙ্গে যোগ করত আরও ল্যাণ্ডস্কেপ পিপাসা।



    তখনও মনের কোণে দানা বাঁধেনি শিল্পী হবার বাসনা। পরে নীহার বিশ্বাস নামক এক শিল্পীর সংস্পর্শে এসে এবং এক আত্মীয়ের অনুপ্রেরণায় ভর্তি হন ইণ্ডিয়ান কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড ড্রাফটম্যানশীপে। বরাবরের মতো পাশে থেকে অনবরত উৎসাহ জুগিয়েছেন মা মনীষা মণ্ডল ও বাবা মনীন্দ্র নাথ মণ্ডল। 





    যে দুর্বলতাগুলি প্রথম দিকে কুরে কুরে খাচ্ছিল অভিজ্ঞতাহীন অদক্ষ যে নবিশ শিল্পী সত্তাকে, পরে প্রচণ্ড পরিশ্রমে  কলেজের শিক্ষক ও সিনিয়রদের কাছ থেকে সৌহার্দ্যপূর্ণ সহযোগিতায় সবল করলেন সেসব। এই পর্বে শিখেছেন বহু মাধ্যমের কাজ। স্কেচিং, জলরঙ, অয়েল, ইত্যাদি। 






    চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়। 
    পরের দিকে শিল্পচর্চায় ব্যাঘাত ঘটল বাবার অকাল প্রয়াণের পর।
সব সময় পেইন্টিং করতে যে ছেলেটি খুব  ভালবাসত, অর্থের প্রয়োজনে তাকে চলে আসতে হল অ্যাপ্লায়েড আর্ট ধারায়। চলল গ্রাফিক্স ডিজাইন, মাল্টিমিডিয়ার ওপর প্রশিক্ষণ ও তার কাজকর্ম। 



    এসময়ে অর্থের প্রয়োজনে পাড়ি দিলেন মুম্বইতে। এই পর্যায়ে সর্বভারতীয় বিনোদনের জগতের বেশ কিছু চ্যানেলের স্টেজ শোয়ের স্টেজ ডিজাইনিংয়ের কাজ করেছেন লাগাতার। এঁকেছেন ফরমায়েশি বিভিন্ন কাজ। চলছিল ভালই। হঠাৎ অভাবনীয় হৃদয় বিদারক এক ঘটনার সম্মুখীন হয়ে তিনি ফিরে আসেন কলকাতায়। এখানে শুরু হয় আরেক সংঘর্ষের জীবন। কলকাতায় বিভিন্ন ফরমায়েশি কাজ করার পাশাপাশি বর্তমানে একটি হিন্দি সিনেমার সহকারী আর্ট ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছেন। 



    এবং সবচেয়ে বড় কথা এর মধ্যে দিয়ে ছবিও এঁকে চলেছেন তিনি। কখনও জল রঙ, কখনও মিক্সমিডিয়ায় ছবি আঁকেন। তবে সবচেয়ে পছন্দের মাধ্যম হল পেন অ্যাণ্ড ইঙ্ক। অদ্ভুত অদ্ভুত সব ছবি এঁকেছেন। তার ছবিতে ধরা পড়েছে সুররিয়্যালিজম এর ছায়া। সালভাদর দালি তার প্রিয় শিল্পী। ভাল লাগে পাবলো পিকাসোর কাজ। ভারতীয় শিল্পীদের মধ্যে গণেশ পাইন, কে.জি. সুভ্রমনিয়াম, মকবুল ফিদা হুসেনের কাজ অত্যন্ত প্রিয়। 
    বাণিজ্য ধর্মী কাজ পেশাগত কারণে করলেও তার প্রথম প্রেম কিন্তু পেইন্টিং। শতকাজের চাপের মাঝেও তার খাতার পাতা ভরিয়ে তোলেন মানস কল্পনার রূপ দিতে। ছবির প্রদর্শনীও ইতিপূর্বে বেশ কিছু করেছেন। এখনও করে চলেছেন। 


    ছবি আঁকার পাশাপাশি ভালবাসেন কবিতা লিখতে। লিখেছেন হাসির গল্প। তবে ট্রাজেডিমূলক গল্প তাকে বেশি টানে। ছবি আঁকার পাশাপাশি সেসব লিখেও ফেলেন খাতার পাতায়।





    পাতা ঝরে যাওয়া মরসুমের মতো এর কারণও বোধহয় অসহনীয় হাওয়ার বাঁকে বাঁকে তার ব্যক্তিগত জীবনের একের পর এক পাতা ঝরার অভিজ্ঞতার কাহিনি। শিল্পীর জীবনও বোধহয় পাতার মতন ঘুরে ঘুরে কথা কয়।
   উপমাটা এইজন্যই এল, কারণ ব্যক্তিগত জীবনে বারংবার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত হয়েছেন। তার ছবিতে তাই বোধহয় বারবার ঘুরেফিরে আসে বিষাদময়তা। অনেক ছবির বিষয় প্রেম। প্রণয়ের সঙ্গে উঠে আসে বিচ্ছেদ যন্ত্রণার দলিল। 


    সাদা কালোর আবহে ইল্যুয়েশনের নাটকীয়তায়, বড় বেদনার সুর বাজে সেইসব ছবিতে। এই যে বারে বারে বিষাদজনিত উচ্চারণ, সেকী ভেতর ভেতর আরেক সৃজন আনন্দের খোঁজ দিয়ে চলে না ক্রমাগত!
    এছাড়াও ছবি করেছেন সামাজিক অসঙ্গতিকে ব্যঙ্গের কষাঘাতে করে। এর পাশাপাশি রাধা কৃষ্ণের প্রেম নিয়ে, হরপার্বতী ও দুর্গাকে কেন্দ্র করেও ছবি এঁকেছেন। সেসব ছবিতে আধ্যাত্মিকতার নিগূঢ় অনুভব ব্যক্ত করার চেষ্টায় রত হয়েছেন।
রঙ তুলি কাগজ কলম নিয়ে আলোছায়া পটের মায়ায় চিন্ময় তন্ময় হবার প্রয়াসে যেভাবে আকুল থাকেন, তাতে তার সিদ্ধি আজ না হলেও আগামী দিনে হয়তো হবে। আমরা যারা শিল্পকে ভালবাসি কায়মনোবাক্যে এই প্রার্থনা তো করতেই পারি তাই না!






লিটল

আর্যতীর্থ

বাসার খেয়ে ভাষার মহিষ তাড়িয়ে বেড়ায় যারা,
শব্দ যাদের রোজের খোরাক, সাহিত্য শিরদাঁড়া,
অনামী যার জীবন কাটে আজন্মকাল ত্যাগে,
তেমন ঋষি খুঁজলে পাবে কেবল লিটল ম্যাগে।


লিটলম্যাগে লিটল শুধু পকেটগুলোর মাপ,
মাথার ওপর বিগ থেকে যায় প্রকাশনার চাপ। 
মন জোগানোর নাটক ছেড়ে মন জাগাতে চেয়ে,
জাহাজ ছেড়ে লিটল ডিঙি বাছে পাগল নেয়ে।


পাগল ছাড়া বলবো কি আর, এমনি তারা খ্যাপা,
নিজের ওপর দেয় চাপিয়ে সংস্কৃতির হ্যাপা।
কোন কোণে কোন নতুন কবি, লেখক প্রাবন্ধিক,
লিখলে ভালো লিটল তাকে নেবেই খুঁজে ঠিক।


বিজ্ঞাপনের ভর্তুকি নেই , প্রচার শুধু গুণে,
পাঠক কেনে খুঁজেপেতে এর ওর কাছে শুনে।
মাটির থাকে বড্ড কাছে , তাই সে লিটল বোধহয়
দূরের থেকে দেখলে তারা জোনাক দেখার বোধ হয়।


বিগের জন্ম লিটল থেকে, মায়ের ঋণ কি শোধ হয়?


লিটল ম্যাগাজিন : সম্পাদকের স্বপ্ন ও সংগ্রাম

ফটিক চৌধুরী


লিটল ম্যাগাজিনের ইতিহাসে লিটল ম্যাগাজিনের যাত্রা শুরু  Ralph Waldo Emerson আর Margaret Fuller সম্পাদিত "The Dial," (Boston,1840--1844) দিয়ে কিন্তু সম্পূর্ণ সাহিত্য নির্ভর সবচেয়ে নামী লিটল ম্যাগাজিন বলতে যা বোঝায় সেটি প্রথম প্রকাশিত হয় শিকাগো থেকে ১৯১২ সালে Poetry : A magazine of verse, সম্পাদক হেরিয়েট মনরো ও এজরা পাউন্ড।
যদিও বাণিজ্যিকভাবে বাংলাসাহিত্যে রাজ করেছে অনেক পত্রিকা। সংবাদ প্রভাকর (১৮৩১), তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (১৮৪৩), মাসিক (১৮৫৪), বঙ্গদর্শন (১৮৭২), ভারতী (১৮৭৭), সাধনা (১৮৯১), ভারতবর্ষ (১৯১৩) এই সব পত্রিকা বাংলাসাহিত্যের মাইলফলক।
অনেকেই মনে করেন বাংলাভাষায় প্রথম আধুনিক লিটল ম্যাগাজিন হচ্ছে ১৯১৪ সালে প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত ‘‘সবুজপত্র’’। পরবর্তী কালে কল্লোল (১৯২৩), শনিবারের চিঠি (১৯২৫), কালি কলম (১৯২৭), প্রগতি (১৯২৭), পূর্বাশা (১৯৩২) এইসব বিখ্যাত লিটল ম্যাগাজিনের জোয়ার আসে, যা বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। ১৯৩৫ থেকে প্রকাশিত হতে থাকে বুদ্ধদেব বসুর সম্পাদনায় বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা ‘‘কবিতা’’ যার প্রভাব ছিল সুদূর প্রসারী। স্বল্প পরিসরে লিটল ম্যাগাজিনের ইতিহাস কিছু বলা হল।
একটি পত্রিকার কথা ভাবলে প্রথমেই চোখে ভেসে ওঠে তার প্রচ্ছদ এবং এটি অন্যতম মূল আকর্ষণ। সেটা লিটল হোক বা বিগ। আগে প্রচ্ছদ শিল্পীদের তেমন মূল্যায়ন হত না, এখন হয়।
লিটল ম্যাগাজিন সম্বন্ধে বলতে গেলে প্রথমেই বহুল প্রচলিত কথাটা বলতেই হয়। লিটল ম্যাগাজিনের বিখ্যাত সম্পাদক বুদ্ধদেব বসু বলেছেন — ‘লিটল কেন? আকারে ছোট বলে? প্রচারে ক্ষুদ্র বলে? নাকি বেশিদিন বাঁচে না বলে?’
এখন এই বয়সে এসে দেখছি অনিয়মিত হলেও অনেক লিটিল ম্যাগাজিন দিব্বি ত্রিশ বছরের বেশি বেঁচে আছে, এমনকি পঞ্চাশ ষাটও আছে বেশ কয়েকটি। এক্ষেত্রে তীব্র জেদ, দায়বদ্ধতা ও অবশ্যই সম্পাদকের জীবনের সবটুকু নির্যাস লিটল ম্যাগাজিনে মিশে থাকে। সন্তানসম।
‘‘সকলেই কবি নয় কেউ কেউ কবি’’, তেমনই সকলেই সম্পাদক নয়, কেউ কেউ সম্পাদক। একজন সম্পাদককে জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ সব কিছু জানতে হয়। পত্রিকা পরিকল্পনা, এডিটিং, প্রুফ রিডিং, কাগজ, সাইজ, বাইন্ডিং সম্বন্ধে ধারণা থাকা জরুরি। লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদককে সৃষ্টিশীল মানুষ হতে হবে, নইলে লেখা নির্বাচন, এডিট ইত্যাদি ব্যাপারে মূল্যায়ন ঠিক নাও হতে পারে। ভালো সম্পাদনা শেখার জিনিস, যত দিন যাবে অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হন সম্পাদক। একটি সম্পাদনা বুঝিয়ে দেয় চরিত্রে স্বভাবে আদর্শে পত্রিকাটি কেন লিটল ম্যাগাজিন। সম্পাদককে জাহাজের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে তুলনা করা হয় অনেক সময়, যাঁকে অনেক দিকে খেয়াল রাখতে হয়। সক্রিয় ভালো সম্পাদকমন্ডলী থাকলে প্রথম সারির লিটল ম্যাগাজিন আখ্যা পাওয়া অসম্ভব নয়। লিটল ম্যাগাজিন থেকেই উঠে আসেন প্রতিষ্ঠিত কবি সাহিত্যিক। সম্পাদকের দায়িত্ব প্রতিশ্রুতিবান লেখকদের সুযোগ দিয়ে তাদের প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটানো। অতীতে অনেক  বিখ্যাত গল্প কবিতা উপন্যাস প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে লিটল ম্যাগাজিনেই, এখনও হয়।
বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক শিবনারায়ণ রায় বলেছেন, যে পত্রিকা গণ মনোরঞ্জনের জন্য, অর্থ উপার্জনের জন্য, রাজনৈতিক দলের দ্বারা পরিচালিত বা প্রভাবিত, পেশাদারিত্ব, বিজ্ঞাপনের আয় ও খ্যাতিমান লেখকদের করুণাসঞ্জাত রচনাদির দ্বারা নির্ভরশীল, তাকে লিটল ম্যাগাজিন আখ্যা দেওয়া যায় না।
লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করা সহজ নয়। রবীন্দ্রনাথ একটি পত্রিকা কিছুদিন সম্পাদনা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘পূর্বজন্মের অনেক পাপের ফলে মানুষ এই জন্মে মাসিক পত্রের সম্পাদক হয়।’’
লিটল ম্যাগাজিন সম্বন্ধে কিছু বলতে গেলে একজনের কথা না বললে ত্রুটি থেকে যাবে। তিনি হচ্ছেন মিতভাষী সন্দীপ দত্ত। ১৯৭৮ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি কিছু পত্র পত্রিকা নিয়ে তাঁর যে জয়যাত্রা শুরু করেন, তা আজ ভারতের অন্যতম সমৃদ্ধশালী ‘‘কলকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরী ও গবেষণা কেন্দ্র’’এ পরিণত হয়েছে। আমাদের কাছে এটা গর্বের।
বুদ্ধদেব বসু একজায়গায় বলেছেন, ‘‘সময়ের সেবা না করে সময়কে সৃষ্টি করাই লিটল ম্যাগাজিনের কুলধর্ম।’’
আমি স্বল্প পরিসরে লিটল ম্যাগাজিনের নেগেটিভ দিকগুলোয় গেলাম না। পুরনো ধ্যান ধারণা ভেঙে নতুন কিছু করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গড়ে ওঠে লিটল ম্যাগাজিন। পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বিরোধী গবেষণা ধর্মী লেখাকে অগ্রাধিকার দিলে লিটল ম্যাগাজিনের চরিত্র ঠিক বজায় থাকে। সম্পাদকের একটি লিটল ম্যাগাজিনকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন ও সংগ্রাম জড়িয়ে থাকে, একথা যেন আমরা না ভুলি।

মেলার ডায়েরি ১ (বহরমপুর)

দেবব্রত ঘোষ মলয়



তিন সম্পাদক বন্ধু ও এক শিল্পীকে নিয়ে শিয়ালদহ থেকে লালগোলাতে উঠলাম উঠলাম সকাল ৮টায়, বহরমপুর স্টেশনে নেমেই দেখি প্রবীর হাসিমুখে। ওর গাড়িতেই আমরা সোজা ঋত্বিক সদন, যেখানে আজ ১লা ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে শুরু হল মুর্শিদাবাদ জেলা লিটল ম্যাগাজিন মেলা ২০১৮৷ ঠিক দুপুর ১২ টায় কলিকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণাকেন্দ্রের কর্ণধার আমাদের প্রিয় শ্রী সন্দীপ দত্তের হাতে উদ্বোধন হল এই মেলার।
যাই হোক, মেলা শুরুর পর আমাদের স্টলে বসলাম৷ ধীরে ধীরে পাঠকবন্ধুরও আসতে শুরু করলেন। পাশেই পেলাম নির্মলেন্দুর পদক্ষেপ পত্রিকাকে। ফলে শুরু হল আড্ডা৷ টুকটাক পাঠক খোঁজখবর নিচ্ছেন৷ এরপর একে একে টেবিলে এসে বসলেন সন্দীপদা সহ অন্যান্য বন্ধুরা। প্রবীর তো সঙ্গে আছেই।
    মূল মঞ্চ থেকে ভেসে আসছে আলোচনা, কবিতাপাঠ ও সঙ্গীতের মূর্চ্ছনা৷ খুবই সুন্দর আয়োজন। নৈশ আহারেরও সুন্দর আয়োজন। তবে আমরা পাততাড়ি গুটিয়ে প্রবীরের আস্তানায়। আবার কাল।গতকাল রাত ৯ টায় মেল শেষ করে এলাম প্রবীরের সঙ্গে ওর আস্তানায়। মেলা কমিটির দেওয়া আস্তানায় বন্ধুরা রইলো আড্ডার মেজাজে। আমরা প্রবীরের বন্ধুবৎসল বাড়িওয়ালা কানু মাইতি আর ওনার পরিবারের আতিথ্যে নৈশাহার সেরে সুন্দর শয্যায় তলিয়ে গেলাম ঘুমের দেশে।



    আজ দ্বিতীয় দিনে ঘুম ভাঙল ভোর পাঁচটায়। এঁরা ভোরে ওঠেন এবং প্রাতঃভ্রমনে যান। সকাল ছটাতেই ধূমায়িত চা পান এবং তারপরই বেরিয়ে পড়া।
    সুন্দর সকালে হালকা শীতের আমেজ। টানা পিচের রাস্তা। মাঝে মাঝে মসজিদ এবং মন্দির। জায়গাটা উত্তরপাড়া। এলাম বাজারে। ছোট বাজার, হরেক রকমের টাটকা সব্জী। কানুদা দেশী ফুলকপি, টাটকা শীষ পালং, বেগুন সহ কিছু সবজী নিলেন। বিক্রেতা মাসীকে ধমক দিলেন এত দাম কেন? হেসে দুমুঠো শিম দিয়ে মুর্শিদাবাদী বাচনভঙ্গীতে মাসি বলল এটা মাগনা দিলাম যাও তো। কানুদা ‘‘বড্ড জ্বালাস’’  বলে সোজা মাছের বাজারে। এ বাজারও ছোট, কিন্তু মাছ খুব টাটকা। কাঁকড়া এবং গুগলিও আছে। 
    বাজার সেরে চায়ের দোকান। বেশ বড় দোকানে এল সি ডি বড় টিভি, ফ্রিজও বেশ বড়। হাসিমুখে কিশোর দোকানি এখানকার গরম লিকার চা সাথে খাস্তা দিলো। এই দোকানে প্রশস্ত বসার জায়গা, এলাকার প্রভাবশালী মানুষদের আড্ডার জায়গা। জানলাম কিশোর দোকানির হাসিমুখ আর মধুর ব্যবহার দোকানের মূলধন।


    বাড়িতে এসে জলখাবারের পর স্নান সেরে আমি প্রবীর বেরিয়ে পড়লাম। আজ মেলা কমিটির ওখানেই খাবো আমরা, মাইতি দম্পতি না খাইয়ে ছাড়তে নারাজ, শেষ রাত্রে ওঁদের কাছে খাবো জানিয়ে শান্তি।
    আবার বেড়াতে যাওয়া। এবার সোজা নদীর তীর। তীরে বিশাল বটগাছে এক মা হনুমান বাচ্ছাকে খাওয়াচ্ছে। পাশে বিশাল মাকালী মন্দির। ডানদিকে মসজিদ। আমরা নৌকাতে ওপারে যাব বহরমপুরে, এই ঘাটের নাম রাধারঘাট। টিকিট কাটা হল মাত্র ৫ টাকা। জেটিতে গিয়ে দেখি পুরোটাই বাঁশের। আড়াআড়ি পাতা বাঁশের উপর দিয়ে প্রচুর মানুষ নৌকার দিকে। নৌকার পাটাতনও বাঁশের, পুরো খোলা বিশাল নৌকা, গোটা টোটো গাড়ী উঠে গেল। আর কত মানুষ। কিন্তু স্থির দাঁড়িয়ে থেকে সবাই ওপারে পৌঁছে গেলাম।


    নৌকা থেকে আবার বাঁশের জেটি দিয়ে নামলাম এপারে। লোকমুখে জানলাম নদীটি ভাগীরথী, কিন্তু ওপারে নদীটি গঙ্গা। শুভকাজে মানুষের ওপারের গঙ্গাজল সংগ্রহ করেন, এপারের জল তো ভাগীরথীর। দুই নদীর মিশ্রিত জলের এ কাহিনীর সত্যতা জানি না। 

    এবার কলেজ, ঋত্বিক সদন যা নাকি এখানকার নন্দন বলে পরিচিত, বিশাল বিশাল মাঠে নানা মেলা, সোজা রাস্তা লালবাগের দিকে, বেশ কয়েকটি বড় বাজার, স্কোয়ার ফিল্ড, টেক্সটাইল কলেজ ইত্যাদি দেখে এক মিঠাই দোকানে। এরা খুব নামী, আহারে বাংলার মেডেল পাওয়া। খেলাম এখানকার বিখ্যাত তুলসী রসগোল্লা, ছানবড়া, কদম। অপূর্ব স্বাদ। এরপর আবার মেলা প্রাঙ্গণ।

    বেশ ভিড় আজ রোববার, মুর্শিদাবাদ জেলা লিটল ম্যাগাজিন মেলার অন্তিম দিন৷ প্রত্যাশামতোই দুপুর ১২ টায় শুরু হল অনুষ্ঠান৷ প্রথম দিনই জেলার কয়েকজন স্বনামখ্যাত চিত্রশিল্পী এঁকেছিলেন কিছু ছবি৷ মানুষ যে শিল্প ভালোবাসেন তা বোঝা গেল যখন দেখলাম তার ছবিগুলোর বেশিরভাগই 'Sold'৷ আমাদের স্টলে জেলার বহু মানুষ এসে আলাপ করলেন, সংগ্রহ করলেন ইলশেগুঁড়ি। সন্দীপদা সংখ্যা আর মেঘের মুলুকের চাহিদা দারুন। শুধু একটাই খেদ, একা আসার দরুন অল্প বই এনেছিলাম, যা আমার পক্ষে বহনযোগ্য। শারদ সংখ্যা অপ্রতুলতা কাউকে কাউকে ফেরাতেও হল, তাঁদের পরে পাঠাব জানালাম।

    মেলার মূল মঞ্চে আজ ছিল জমজমাট অনুষ্ঠান৷ গিটার, রবীন্দ্রসংগীত, শাস্ত্রীয় সংগীত। বিতর্ক, সেমিনার, গল্প কবিতাপাঠ। আমার চূড়ান্ত গন্তব্য-৩ মঞ্চে পাঠ করবার পর বেশ কয়েকজন এসে জানালেন খুব ভাল লেগেছে। এটাই প্রাপ্তি।
মতিউল, নির্মলেন্দুর পাশাপাশি বেশ কিছু বন্ধু টেবিলে এলেন। নির্মলেন্দুর সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা। 




এর মধ্যেই প্রবীরের সঙ্গে খাবার টেবিলে। দারুন আয়োজন। গরম ভাত, ডাল, বাদাম আলুভাজা, পটল ফুলকপি সবজী, মাছের ঝাল, চাটনী আর শেষপাতে এখানকার অসাধারণ রসগোল্লা।
এদিকে মঞ্চে চলছে সানাই, গিটারে কিছু পরিচিত গান, সরোদ বাদন। একদম শেষে মার্গ সঙ্গীত মন ভরিয়ে দিল।
সবথেকে মনে দাগ কাটল মুর্শিদাবাদ জেলার গ্রামীণ বধূ ইলশেগুঁড়ি সংগ্রহ করলেন, দিয়ে গেলেন হাতে লেখা কবিতা। আর জেলার অচেনা বন্ধু স্টল খুঁজে এসে হাত বাড়িয়ে বললেন — আপনি ইলশেগুঁড়ি পত্রিকার মলয়বাবু?
পাততাড়ি গুটাবার পালা। ফেস্টুন খুলল প্রবীর, সামান্যই পড়ে থাকা বই গুছোলাম, মেলা কমিটির কর্তারা জড়িয়ে ধরলেন, আসতে বললেন আবার। বিভিন্ন কবি বন্ধুদের বিদায় জানালাম। সন্দীপদার কাছেও বিদায় নিলাম। বিশাল ক্যানভাসে লিখলাম আমার কবিতার দুটো লাইন -
‘‘ফুল ছেঁড়া বড় নয়
গাছ পোঁতা বড় কাজ
বাড়িয়েছি আমি হাত
তুমি এসে ধর আজ।’’

    মন্তব্য খাতায় ধন্যবাদ দিলাম সবাইকে।
আমার মতে মুর্শিদাবাদ জেলা লিটল ম্যাগাজিন মেলা সফল। যদি আসছে বছর আবার আসতে পারি খুশী হব।

    আজ সোমবার বাড়ী ফিরছি মালদা ইন্টারসিটিতে। এক কিশোরী ভিখারিনী না না মানবী ঝাড়ু হাতে সাফাই করলেন সফরক্লান্ত আবর্জনা ভরা কামরাটিকে। আমরা তার কৌটোতে দু এক টাকা দিয়ে পা তুলে বসলাম।

০৩-১২-১৯

মেলার ডায়েরি-২ (মানকুন্ড)

দেবব্রত ঘোষ মলয়




যোগসূত্র বোধহয় একেই বলে।
বর্ধমান লিটল ম্যাগাজিন মেলার ডায়েরিতে উল্লেখ করেছিলাম ট্রেনে আলাপ হওয়া বিশু মন্ডলের সানাইয়ের দলের কথা। স্টেশনে ছাড়াছাড়ি হবার আগে বলেছিলেন, বাবু ডাক হলে বলবেন। ডাক এসেও গেল প্রায়। বন্ধুর মেয়ের বিয়ে। বন্ধু বলল - বিশু মন্ডলের দলকে চাই, নহবত বসাবো। কার্ড দিলাম। তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ। কি আশ্চর্য, ১ তারিখ সন্ধ্যায় মানকুন্ডুতেই একটি রিসর্টে নহবত আছে বিশুর দলের। আসতে পারবে না বন্ধু। আমরা তিন সম্পাদক সঙ্গে এক সদস্য দ্বিতীয় দিনে মেলার শেষে সোজা বিয়েবাড়িতে। মায়াবী পরিবেশে বাগানবাড়িতে নহবত বাজছে, সুসজ্জিত গেটের উপর তৈরি মঞ্চে। ওঠার যে বাঁশের সিঁড়ি, তা দেখে আর ঝুঁকি নেওয়া গেল না। নীচে থেকেই ভিডিও করলাম আমি আর চিন্ময়। স্বপন আর কৃষ্ণদা তখন গাড়িতেই বসে।


বর্ধমান মেলায় আলাপ হওয়া নহবত দল মানকুন্ডু মেলায় বায়নার পথে, যোগসূত্র নয়?
গত কয়েক বছরে সারা বাংলায় লিটল ম্যাগাজিন মেলার একটা জোয়ার এসেছে। গতবার তারকেশ্বর, বসিরহাট, বহরমপুর সহ বেশ কিছু মেলায় ছিলাম। এবার ডাক এল মানকুন্ডু থেকে। ওখানকার মানকুন্ডু সাধারণ গ্রন্থাগারের এবার ৭৫ বছর পূর্তি। এই উপলক্ষে প্রথম মানকুন্ডু মেলার আয়োজন করেছেন ওঁরা। মেলায় যাবার সম্মতি দি। ওঁরাও মঞ্জুর করেন ভালোবাসায়। মেলার আগেই মন টানে ওঁদের অভিনব প্রচার ও আন্তরিকতা। একটি হোয়াটসয়্যাপ গ্রুপ খোলেন ওঁরা, যেখানে অংশগ্রহণকারী সব সম্পাদক বন্ধুরা অন্তর্ভুক্ত হন। বহু চেনা বন্ধু পাই, বহু নতুন বন্ধু হয়। এরপর ওঁরা প্রত্যেক সম্পাদককে দিয়ে সুন্দর একটি ভিডিও বার্তা প্রস্তুত করেন ও তা ছড়িয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়া সাম্রাজ্যে। সঙ্গে সুন্দর সুন্দর পোস্টের। সাড়া পড়ে যায় লিটল ম্যাগাজিন জগতে। এ ভাবে যে লিটল ম্যাগাজিনের প্রচার হয়, ভাবা হয়নি তো আগে। দেখতে দেখতে এসে যায় ৩০ নভেম্বর। 
কলকাতার কাছেই মানকুন্ডু। আগে যাইনি কখনো, যদিও শ্রীরামপুর, চুঁচুড়া বা চন্দননগরে গিয়েছি। গ্রুপেই ওঁরা ট্রেনের টাইম জানালেন। সেইমত ব্যাগ কাঁধে দুপুর দুপুর পৌঁছে গেলাম হাওড়া স্টেশন। শনিবারের বিকেল, সে কি ভিড় ট্রেনে। মানকুন্ডু নামলেন বিকেল ৩ টেয়। ষ্টেশনের একদম সামনেই লাইব্রেরি। দ্বিতল। প্রাচীন। বর্ধিষ্ণু ও বইয়ে ভরা। দীর্ঘদিন গ্রন্থাগারে জড়িত ছিলাম, শতবর্ষ উদযাপনও করেছি। তাই গ্রন্থাগারের প্রতি একটা আলাদা টান অনুভব করি। গ্রন্থাগার লাগোয়া পার্ক, সেখানেই সুসজ্জিত মেলা। ঢুকেই উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলাম। বসলাম টেবিল সাজিয়ে। মঞ্চে নানান অনুষ্ঠান। মানুষজনের আনাগোনা বাড়তে লাগলো। ইলশেগুঁড়ি লিটল ম্যাগাজিন বিশেষ সংকলন অনেকেই নিলেন, তারপরই চাহিদা মেঘের মুলুক আর ইলশেগুঁড়ি-৫ (কলিকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরীর ৪০বছর পূর্তি সংখ্যা)-র। এখানে মহিলা এবং ছোটদের আনাগোনা প্রচুর, ছোটদের বই ও পত্রিকার চাহিদাও বেশ। গল্পদেশ, শ্রমণ, দাঁড়কাকের বাসা বা ছোটদের রূপকথা সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকার বহু বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় একসময় রাত বাড়ল। মেলার কর্মকর্তা বন্ধুরা খোঁজ নিতে লাগলেন মাঝে মাঝেই। রাতে বাড়ি ফিরেও মেলার ছবি ভেসে উঠছে চোখে।


পরদিন রোববার মেলার শেষ দিন। আজ সাথে দুই সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য স্বপন আর চিন্ময়, একসময় কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন করা চিন্ময় এখন দুবাই প্রবাসী, কিন্তু সাহিত্যের টানে হাজির মেলায়। আর স্বপন লং ড্রাইভের ছুতো খোঁজে, ফলে আজ ফেরার তাড়া নেই ট্রেনের জন্য। সঙ্গে কৃষ্ণদা, পত্রিকা সদস্য। আজ মেলায় বেশ ভিড়। আমি স্টল সামলালাম, ওরা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন স্টলে পত্র পত্রিকা ও বই কিনল। আমাদের পত্রিকা ও প্রকাশিত বই অনেকেই কিনলেন, আমাদেরও কেনা হল অন্য স্টলের কিছু সম্পদ। বেশ কিছু কবিতাপাঠও ভেসে এলো কানে, যদিও আমরা স্টলে বসে শুনলাম শুধু। অনুগল্পপাঠ অতটা মন কাড়েনি, কারণ মেলার আড্ডার পরিবেশে গল্পপাঠ কতটা যুক্তিযুক্ত, তা বোধহয় ভাবার বিষয়। দুটি সুন্দর আলোচনা হল, যার একটি লিটল ম্যাগাজিনের প্রকাশনায় এগিয়ে আসার প্রসঙ্গে, খুব ভালো লাগলো। তবে বক্তারা আগে থেকেই নির্দিষ্ট, হতেই পারে, কিন্তু এই ধরণের সেমিনারের শেষে দর্শক ও উপস্থিত লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক ও প্রকাশকদের সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় থাকলে আরও সম্পূর্ণ হত সবটা। তবে বলতেই হবে, প্রথম বছরেই সফল মানকুন্ডু মেলা।
বিকেলে হঠাৎই সন্দীপদা এসে সাড়া জাগালেন মেলায়। বর্ধমান মেলায় আমি মানকুন্ডু মেলার কথা বলায় সন্দীপদা জানান তিনি জানেন না এই মেলার কথা। গতকাল লাইব্রেরির সমাবর্তন ছিল, তাই আজ চলে এলেন লিটল ম্যাগাজিনকে ভালোবেসে। মঞ্চে ওঠার আগে স্টলে এলেন, দিলেন কালকের অনুষ্ঠানের বুকলেট। সব স্টল ঘুরলেন। এরপর মঞ্চে উঠে সুন্দর একটি বক্তব্য রাখলেন।  সন্ধ্যায় ঘটল অভিনব ঘটনা, আয়োজক গ্রন্থাগারের কর্তৃপক্ষ সব স্টলে ঘুরে ঘুরে বই কিনলেন, মন ভরে গেল।


দেখতে দেখতে চলে এলো শেষের বেলা। স্টল গুটিয়ে ব্যানার ভাঁজ করে হাত মেলালাম সবার সাথে।বললাম যাচ্ছি, ওঁরা বললেন যাচ্ছি নয়, বলুন আসছি। ঠিকই তো, আসব আবার আগামী বছর ।
ফেরার পথে ওই বিয়েবাড়িতে বিশু মন্ডলের সানাই ভিডিও করলাম। বন্ধুরা মানকুন্ডুর পানতুয়া এনেছিল, খেতে খেতে ধরলাম দিল্লী রোড। চিন্ময়কে নামালাম ওর বাড়ি কোনা চামরাইলে, কফি খেলাম ছোট আড্ডার সাথে। দেখলাম চিন্ময়ের লিটল ম্যাগাজিনের দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহ। পরশু ও ফিরে যাবে দুবাই, তারপর বইমেলায় আসবে আবার, ইলশেগুঁড়ি থেকে প্রকাশিত ওর কাব্যগ্রন্থের উদ্বোধনে।
এবার বেনারস রোড হয়ে কোন এক্সপ্রেসে। বাড়ি ফিরতে রাত এগারোটা।
মনে থাকবে প্রথম মানকুন্ডু মেলা।

সাংস্কৃতিক সংবাদ ১


প্রকাশিত হল ইলশেগুঁড়ি প্রকাশনের ছোটদের নিজস্ব পত্রিকা কুড়িৃঁ-র আত্মপ্রকাশ সংখ্যা। গতবছর ই-পত্রিকা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে কুঁড়ি। ২০২১ বাংলা একাডেমি মেলায় পত্রিকাটি উদ্বোধন করল ছোট্ট সদস্য সৃজা পোড়েল।

 

সাংস্কৃতিক সংবাদ ২



১০ই জানুয়ারি ২০২১ জন্ম নিল সাঁতরাগাছি বাকসাড়া সাহিত্যসভা (সাবাস)।

"সাবাস"-এর শুভযাত্রা শুরু হল সাঁতরাগাছি পাখিরালয়ে। বহু সাহিত্যপ্রেমি মানুষের উপস্থিতিতে তৈরি হল পরিচালন সমিতি।

সভাপতি - দেবব্রত ঘোষ মলয়

সহ সভাপতিবৃন্দ - তুহিন কান্তি বিশ্বাস, চিত্তরঞ্জন ব্যানার্জী, সমীর সরকার ও বাসুদেব দাস।

আহ্বায়ক - দিলীপ পাল

সম্পাদক - অমিতাভ দাস

কোষাধ্যক্ষ ও সহ-সম্পাদক - সৌরভ চক্রবর্তী

কার্যকরী কমিটি - শিবু দত্ত, দীননাথ সাহা, মৌসুমী লাহিড়ী ও নন্দা পোড়েল।

    প্রতি মাসের শেষ রবিবার বসবে "সাবাস"-এর সাহিত্য বাসর। 


সাঁতরাগাছি পাখিরালয়ে একটি বৃক্ষ রোপনের মাধ্যমে শুরু হল এই যাত্রা।

                                                                                                              



অনিচ্ছুক

সুমন দিন্ডা


আজ রাতে দেখা করার কথা ছিলো 
অথচ কাছে যাওয়ার আগে 
বারন শব্দে কান ভাঙালো মশাদের দল,
মশারির হার্টফেল থামিয়ে দিলো অন্ধকার, 
আলনার কোনে মুখ লুকোনো জামাকে
টেনে বার করতে গিয়ে 
বেরিয়ে এলো অনেকটা স্মৃতি। 
আবেগ ঝুলে পড়লো আলমারির মাথা থেকে, 
নড়বড়ে দরজা একা একাই বন্ধ হলো
আর চেনা বিরহের রোগা মোমবাতিটা
জ্বলতে জ্বলতে সমস্ত গল্পগুলো গলিয়ে দিলো।
পূর্বজন্মের ধারাপ্রবাহে যেটুকু অপ্রাপ্তি 
তার সকল চেতনায় এক তোমার আবির্ভাব 
পাতায় পাতায় অক্ষর কেটে বসানো,
সেখানে আর কোনো যাত্রাপথের কি প্রয়োজন? 
এবার বলো,
এতকিছু দূরে রেখে কীভাবে দেখা করবো
এক মৃত্যু থেকে আরেক মৃত্যুর সাথে? 

খেয়ালী খাম

শুভজিৎ দাস


‘‘টুপ টাপ খই তুলে নিয়ে ফেলি খামের অতল কিনারে, 
ফেরিওয়ালার ঘুমভাঙানি চিৎকার 
ডানা মেলে উড়ন্ত পথে,
ঘুম ভাঙে হৃদপিন্ডের অবকাশে 
মেঘলা মুখ তখন চেয়ে থাকে, 
জানে সে এ ঘরে চা ফোটার অধিকার নেই;
নিছকই এটা শহর এক নাম না জানা নাটকের প্রেক্ষাপট, 
অজানা সিনেমার কোন ক্যামেরার আঙ্গেলের কোন পটভূমি;
অভিনয় রয়ে যায় মাটির অবতালে সংকীর্ণ শরীরের আঁধারে‌।
সেই মেঘলা মুখো শরীর হয়তো বা 
শাখাপ্রশাখা যুক্ত মানুষের হাসির কাব্যগ্রন্থ,
ডুবে থাকা খেয়ালি খামের প্রান্তরে!’’

জ্ঞানের আলোয় বাকদেবী

শুভ্রা ভট্টাচার্য


মাঘী শুক্লা শ্রীপঞ্চমী তিথিতে
বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আগমন,
শিক্ষা অর্জনে বিদ্যার্থীর ঘরে ঘরে
ভক্তিসহ বীণাপানির পূজা অর্চন।
শ্বেতবসনা শ্বেতহংসবাহিনী হতে
জাগ্রত বিবেক বুদ্ধি চেতনা জ্ঞান,
সংগীত শিল্প কলা কুশলীর তরে
চরনে সমর্পিত এ আত্মা মন প্রাণ।
অজ্ঞ মূর্খ অগতির গতি তুমি
দু হাত ভরে করো বিদ্যা দান,
আঁধার মনের মলিনতা ঘুচায়ে
অশিক্ষা অজ্ঞানতা হতে পরিত্রান।
বীনা রঞ্জিত সুরের রানী তুমি
সুরেলা ছন্দে বাজাও বাদ্যযন্ত্র,
সমাজের সব অশুভ শক্তি নাশে
জাগাও প্রাণে আত্ম শুদ্ধির মন্ত্র।
দেবীবাসন্তীর পুজো আরাধনায়
একাগ্র চিত্তে নারী শক্তির বন্দন,
সমাজের অসুর প্রাণে জাগ্রত হোক 
সকল নারীর প্রতি সম্ভ্রম সম্মানন।
তব শ্বেত শুভ্র জ্যোতির ছটায়
উদ্ভাসিত আলোকিত এ ভুবন,
আশিস রেনু হতে পড়ুক ঝরে
সুশিক্ষাজাত শুভ চিন্তন চেতন।।


আবার দেখা পাব 

সুলগ্না বাগচী 


ঘুমন্ত সিঁড়ি বেয়ে রোজ নেমে আসে সে
রোদ পোহানো দিনে আমার যাওয়া বারণ 
প্রভাবিত কথারা উল্লাসে মেতে আজ
যা কিছু ভুল বোঝাবুঝি মিটে গেছে,
রাতের জ্বালানো অন্ধকারে যে নদীতে
বইছে উল্টো স্রোত — 
সেই তীর ধরে মাঝরাতে এক দুঃখ আসে
উশকোখুশকো দুঃখে উস্কানি আছে বেশ, 
কিছু জীবনের পরিণতি এমনই হোক
দূর থেকে এজীবনে তোমায় দেখতে যাব
একবার বলো তখন, নীল পৃথিবীতে 
পরজন্মে আবার তোমার দেখা পাব ৷ 


ক্ষিপ্ত কবির কলম...

কুনাল গোস্বামী 


তখনও পৃথিবী ঘুমিয়েছিল আমারই মতো 
দীর্ঘ ছায়াপথ অতিক্রান্তের পর...
হঠাৎই আঁশবঁটিতে সান্ দেওয়া কটা কবিতা তেড়ে আসে উল্কাপিণ্ডের মতোন 
এক একটা যেন মূর্তিমান আতঙ্ক
সর্বাঙ্গে ক্ষতের চিহ্ন, রক্তচ্ছাপ
কারা যেন তাদের শরীর থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে সবকটা আঁশ;
ঘুমের মধ্যে ভুলে যেতে বসেছি —
 ‘‘তখনও আমি কবি হতে পারিনি 
ঠিক যেমন পৃথিবী নক্ষত্র হতে পারেনি!’’
আমার আর পৃথিবীর সেই ঘুম আরও কত শতাব্দী অটুট থেকে যেতে পারে? 
আরও কটা কবিতা হিংস্র হতে পারে?
যদি কোনোদিন কোনো ভোরে খুঁজে পাই জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে সূর্যের নিজেকে জ্বালিয়ে দেওয়ার কারণ 
সেদিন ঘুম থেকে উঠে লিখে যাবো কবিতারা হিংস্র নয়
ক্ষিপ্ত কবির কলম।


অনুতাপ

সুমিত মুখার্জি


জীবন খাতার শেষ পান্থ  
এসেছি আমি অজান্তে
হয়নি ভাবা এতদিন 
সুখ-দুঃখ বিরামহীন 
জেনে না জেনে করেছি কত কি ?
আজ খুলে দেখি সেই খাতা
আজ খুলে দেখি সেই খাতা 
মলিন দুটি চোখের পাতা 
পাপ পুণ্যের হিসাব যে বাকি
আমার কলম লেখে অবিরাম
চাওয়া পাওয়ার মগ্ন ছিলাম 
বন্ধ ছিল দুটি চোখের পাতা 
দেখতে পাইনি আসল সুখ 
আজ অনুতাপের আগুন জ্বলে 
নিভবে কি তা নয়ন জলে 
এ ভব সংসারে আমি যে পাপী 
অনুতপ্ত হয়ে মলিন
আপনারই নাম জপি

                             

অস্তিত্ব

প্রতিম ভট্টাচার্য


আমি ভালো নেই। 
কেটে গেছে অনেক গুলো দিন 
ভয় নেই আর
যাচ্ছি আমি  ত্রিদিব।
সে তো নেই আজ 
পলাশের গন্ধ মিশে গেছে রক্তের সাথে।
পৃথিবী কি বেঁচে আছে এখন 
সবই তোমার হাতে 
দহনে কি তার বুক কাঁপে আজ?
পৃথিবী কে দিই ছুটি 
চোখ কান সব কি গেছে তার 
স্বপ্নকে ধরে নিয়ে লুটি।
রক্তিম কি এখনো আছে আজ?
সে তো মিশে আছে মাটির গন্ধের সাথে।
সে তো আজ দেবলোক এর সাথী। 
তেরো পার্বণের আভাস কি আর ঘটে। 
শরীর কি বর্তমানেও গরম আছে, 
সে তো আমার ও তোমার হাতে।

ধোঁয়া 

সুপ্রিয় মান্না 


ভাঙা অস্তিত্ব টাকে সামলে রাখি
ছোট হয়ে যায় নির্দোষ ছায়া যখন
উদাসীন খালি পথে ঝিমন্ত দুপুর 
খুঁজে ফেরে নিভৃতে শহরের পুরানো এলবাম্ 
রঙিন গ্যাস বেলুন এক চিলতে হয়ে 
হারিয়ে যায় না আর
চোখ জুড়ানো ঝিনুক পড়ে থাকে
সৈকতে নোনা জলের আদরে 
গলা অবধি জলে হাবুডুবু মনুষ্যত্ব
ক্রমশ অস্পষ্ট হয় চেতনার আকাশ 
এখন আকাশের দিকে চোখ গেলে
জল আসে চোখে
একটা অসীম শূন্যতা 
হাঁ করে গিলতে আসে,,, 
জনস্রোতের কুয়াশায় কোনঠাসা মন
হাজার'ও অপমান সহ্য করছে 
উড়ে যেতে দেখেছে 
আকাশের পর আকাশ পেরিয়ে কুণ্ডলী  পাকানো জ্বলন্ত চিতা'র ধূঁয়ো। 
সিগারেটের ধোঁয়ায় ছোট ছোট গোল্লা 
পাকিয়ে ঠিক যে ভাবে তুমি ধোঁয়া নিয়ে খেলো!

ভরসা

দীপাঞ্জন সাহা 


অভিনেতার মুখপাত্র, কৌশলময় আভিনয়,
মুখোশের আড়ালে করে চলে ছলনা অবিরাম, 
প্রেম,প্রীতির মিথ্যে উচ্ছাসে, ভাসিয়ে নেয়
মনের গহীন থেকে একচিলতে খড়কুটো। 
আশ্বাসের বুলি আওড়ায় বেহিসেবী হয়ে উঠে, 
যেন না বুঝে হাতড়ে চলা দৃষ্টিহীনের মতো,
অনন্ত পথের পথিক, সন্ধান পাওয়া মরীচিকা 
বাঁচার একমাত্র ভরসা যখন হয় ভুল করে।

নালিশ

সুমনা ভট্টাচার্য্য

শেষমেশ তোমার কাছেই ফিরে আসা…
ভেঙেচুরে ,ছিঁড়েখুঁড়ে একশা হলেও ফিরে আসবো তোমার কাছেই
 আয়না মুখ ঢেকেছে  অসহযোগী  নোটিশে,
জানালা খোলা খাতা মোড়া হয়েছে বহু আগে –
তবুও...ইত্যাদি সবকিছু সাঙ্গ হ’লে পরেও/
ব্যালকনির রেলিংএ অপেক্ষার একফালি ক্লান্ত রুমাল বাঁধা থাকবে তোমারই জন্য।
জল ঝরিয়ে ক্লান্ত আকাশের দগদগে স্মৃতি মুছে দিতে ফুরফুরে অঘ্রানী মেঘ আসে যায় -
পথের ধুলোর বুক আলতো ছুঁয়ে আসনপিঁড়ি পর্ণমোচী উৎকণ্ঠা … 
এসবের মাঝেই-   
ঘরের মেঝে ,সিঙ্কের বাসন,শোকেসের কাচে সহিষ্ণুতার প্রলেপ লাগাতে লাগাতে
চোখের চালশে বিভ্রমের পাশে লাইনারের আপোশ গণ্ডি আঁকতে আঁকতে 
খুঁজে নেবো তোমার কাছে -তোমারই গল্পে ফিরে আসার একটা দুটো অজুহাত
তোমার পলিতেই তো নোঙর গাঁথার কথা  …
তোমার কাছেই প্রেমের নালিশ- পুরুষ তুমিই যে চোখের বালি। 
তোমার কথাতেই বিধিভঙ্গের মুদ্রাদোষ আমার বরাবরের...
তোমার কথাতেই অবাধ্য আমার নিঝুম ওড়না ,
 তোমার কথায় জুড়ে যাচ্ছি দু’একটা করে ছেঁড়াখোঁড়া দিনের পৃষ্ঠা - 
দু’এক দিন কিংবা জ্বলেপুড়ে খাক আরো এক জীবন- ঘরে ও বেঘোরে ;
তারপর বুকপকেটের শেলফে আনকোরা বইয়ের গন্ধ ভরে নিতে নিতে 
সবুজ  চায়ে সবুজ আভিধানিক শৈত্য ভিজিয়ে নিতে নিতে -
খারাপ অথবা ভালোবেসে -বিশ্বাস জড়িয়ে বা বিশ্বাসের গলা টিপে 
চারপাশে এঁকে দেবো  অন্তরিন ক্ষত – তোমার সহজবোধ্য হাসির খামে মুড়ে…    



পূর্বকথন:-
              জরায়ু ক্যান্সারের সূচক সি.এ.১২৫ রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট অস্বাভাবিক রকমের বেশি আসে জয়িতা নামের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি মেয়ের,ইতিমধ্যে ইউ.এস.জি রিপোর্ট জানান দিয়েছে টিউমারের অস্তিত্ব।অপারেশনের কিছুদিন আগেই এক হাসপাতালে ঘটে যায় অপ্রীতিকর ঘটনা রোগীর আত্মীয় চরমভাবে নিগৃহীত ও আহত হন এক জুনিয়ার ডাক্তার।


   একটা রড ক্রমশ বাড়ছে,গর্ভ লক্ষ করে বাড়ছে,তারপর....সেটা গেঁথে গেল গর্ভ লক্ষ্য করে।আঃ....আঃ প্রচন্ড যন্ত্রনা,প্রচন্ড বেগে যেন‌ কেউ অ্যাসিড ঢেলে দিল নিম্নাঙ্গে।আমার সন্তান, আমাদের সন্তান, চারিদিকে এত কালো কেন??
একটু আলো দাও,একটু আলো!!
             টিউমারের আকৃতি একটা ছোটোখাটো টেনিস বলের মতো।ডাক্তার তখন সেটা জয়ীর মায়ের হাতে তুলে একটা কনটেইনারে করে তুলে দিয়ে বলছে যে এটা বাইরে থেকে বায়োপসি করিয়ে নিলে ভালো হয় কেননা সময় অনেকটাই চলে গেছে।যত তাড়াতাড়ি রিপোর্ট পাওয়া যায় ততই মঙ্গল। সরকারি হাসপাতালে করালে রিপোর্ট আসতে কমপক্ষে দেড়মাস সেই দেরি জয়ীর পক্ষে মোটেই ভালো হবে না।আধো জাগরণে জয়িতার কানে কথাগুলো ঢুকলেও পুরোপুরি ঠাহর করতে পারছিল না সে। অপারেশন টেবিলে শুয়ে অচেতন অবস্থায় দেখা স্বপ্নের রেশ তখনো মাখামাখি হয়ে আছে বাস্তবের সঙ্গে। বুকের মধ্যে একটা কান্না যেন জমে আছে।এক নারীর যে গোপন ইচ্ছা তা হল মা ডাক শোনা তার আর কোনোদিনই পূর্ণ হবে না জয়ীর জীবনে। অজান্তেই গাল বেয়ে গড়িয়ে যায় উষ্ণ অশ্রুজল। চিরপরিচিত হাতের স্পর্শে জয়িতা চোখ মেলে,মামা!আর ঠিক তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শর্মি আর সরিৎ। মামা জয়ীর হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে কানে কানে বলে ওঠে "ভ্রু পল্লবে ডাক দিলে দেখা হবে চন্দনের বনে"। ঠিক তখনই জয়ীর মনটা হঠাৎ ভারমুক্ত হয়ে যায় এত কষ্টের মধ্যেও হাসি ঝিকিয়ে ওঠে জয়ীর মুখে।এখন কেমন বোধ করছেন? জয়ী মুখ ঘুরিয়ে দেখে সরিৎ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে জয়ী শুধু আলতো করে বলতে পারে, ভালো, তারপর ক্লান্তিতে চোখের পাতা বন্ধ করে,এরই মধ্যে কানে আসে শর্মি বলছে,জানিস তোর তিন বোতল রক্ত চলেছে তার মধ্যে এক বোতল সরিৎদা নিজে দিয়েছে আরো দু বোতল জোগাড় করে দিয়েছে। চোখ বোজা অবস্থাতেই জয়ী যেন সরিৎ এর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা অবয়বটা দেখতে পায়।সে বেশ বুঝতে পারে সরিৎ তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু কেন,সে কি দিতে পারবে সরিৎকে? আর সকলের আশংকা সত্যি করে যদি তার টিউমারের বায়োপসি রিপোর্ট ম্যালিগন্যান্ট আসে তাহলে....সে ক'দিন ই বা বাঁচবে,ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার আর্থিক জোর তার কোথায়! এরই মধ্যে মনে পরে যায় তার স্যাম্পেল বায়োপসি হওয়ার পর তখন তার রিপোর্ট বিনাইন অর্থাৎ নন ম্যালিগন্যান্ট হয় তখন সে রিপোর্ট হাতে নিয়ে কেঁদে ফেলেছিল ভেবেছিল বেঁচে গেছে। কিন্তু তারপর শুরু হলো জুনিয়ার ডাক্তারদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট,পেছোতে লাগলো অপারেশনের তারিখ।
ক্রমশঃ












No comments

Theme images by luoman. Powered by Blogger.