Header Ads

Header ADS

ইলশেগুঁড়ি ই-পত্রিকা ৭




একদম সামনেই অন্ধকার। নিকষ কালো।
ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাক খেয়ে উঠে যাচ্ছে আকাশে, 
নীল ঢেকে যাচ্ছে ধূসরতায় ...
একটা গন্ধ ভেসে আসছে, ধূসর গন্ধ ...
শ্বাস নিতে বড় কষ্ট ... বড় কষ্ট ... বড় কষ্ট ...
স্বজন হারিয়ে যাচ্ছে, 
হারিয়ে যাচ্ছে যার সাথে কথা হল কাল ...
হারিয়ে যাচ্ছে যার যাবার সময় হয় নি ...

কিন্তু এখানেই শেষ না 
ওই দেখ, সব ঝড়ের শেষে শান্ত হয় প্রকৃতি ...
আবার ডানা মেলে ফিনিক্স পাখি, 
নীচে পড়ে থাকে একমুঠো ছাই ...
ধোঁয়ার আর গন্ধের পাশাপাশি কত জন দেখ রাস্তায়
হাতে হাত রেখে পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের কাছে
তখন ভরসা পাই, বল আসে বুকে
কই, এই দুঃসময়েও তো একা নই একা নই ...
এসো, সব্বাই সবার পাশে থাকি

পাশে থাকার এই প্রয়াসেই সবাই মিলে ই পত্রিকা
আজ, ২৫শে বৈশাখ, স্মরণ করব তাঁকে
যিনি আমাদের আশ্রয়, রাজদ্বারে আর শ্মশানে
রোজ রাত্রে তাঁর গান ঘুম পাড়ায়
যাপনের প্রতি মুহূর্তে প্রেরণা জোগায় তাঁর কবিতা
তাঁর কথাই ধার করে বলি
‘‘বিপদে মোরে রক্ষা কর এ নহে মোর প্রার্থনা
বিপদে আমি না যেন করি ভয়’’

সবাই ভাল থেকো, সুস্থ থেকো। 

দেবব্রত ঘোষ মলয়

নিবন্ধ

রবীন্দ্রনাথের নারীভাবনা - ডঃ রমলা মুখার্জ্জী
রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা - আর্যতীর্থ 
শরবত শরবৎ - তপন তরফদার 
বন্ধু হে আমার.... - অমিতাভ

কবিতা

মানচিত্র - কৌশিক চক্রবর্তী 

রবীন্দ্রনাথ - আর্যতীর্থ
রবীন্দ্রনাথ - দীপক আঢ্য 
পূব আকাশের রবি - প্রদীপ কুমার পাল
মানুষ ঠাকুর - দিলীপ পাল
প্রবেশ অবাধ - পিয়াংকী
মুক্তিদাতা রবি - দিলীপ কুমার খাটুয়া
রবি স্নান - শীতল চট্টোপাধ্যায়
ছোটা, কালো নীল অন্ধকারেও - উত্তম চৌধুরী
তিনিই রবীন্দ্রনাথ - সমীর সরকার
প্রতিকল্পের খোঁজে - অভিষেক ঘোষ
নববর্ষ - অঙ্কিতা পাল  
তোমায় যেমন পেয়েছি - অচিন্ত্য কবিরাজ 
আমার রবীন্দ্রনাথ - বাণীব্রত
প্রিয় রবি - কর্ণ (অর্ক)

শঙ্খ ঘোষ স্মরণে

শেষ লড়াইয়ের ছবি - চিন্ময় মণ্ডল

সৌমিত্র স্মরণে

অপরাজিত - মিঠু দত্ত


রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বিশ্বমানবতার পূজারী। সকল মানুষকে শিক্ষায়-সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ করতে পারলেই দেশ ও সমাজের ক্রমোন্নতি ঘটবে এটাই তিনি বিশ্বাস করতেন। আর এই উদার দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকেই রবীন্দ্রনাথ নারীকে বিশাল কর্মযজ্ঞে সামিল করে বিশ্বের দরবারে পুরুষের পাশে স্বমহিমায় দাঁড় করাতে চেয়েছেন। তাই তাঁর নারীকে আহবানঃ-
"এসো ছেড়ে, এসো সখী কুসুম শয়ন
বাজুক কঠিন মাটি চরণের তলে।"
রবীন্দ্রনাথের য়ুরোপ প্রাবাসী পত্রে লিখেছিলেন,
“সমাজের অর্ধেক মানুষকে পশু করে ফেলা যদি ঈশ্বরের অভিপ্রেত বলে প্রচার কর, তাহলে তাঁর দানের অপমান করা হয়। মেয়েদের সমাজ থেকে নির্বাসিত করে দিয়ে আমরা কতটা সুখ ও উন্নতি থেকে বঞ্চিত হই তা বিলেতের সমাজে এলে বেশ বোঝা যায়।“
 রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করেন মধুময় এ পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধকে উপভোগ করতে হলেও নারী সমাজকে সম্পূর্ণ বিকশিত হয়ে ওঠার সুযোগ করে দেওয়া দরকার। অসম চিন্তায় সমাজ ঠিকমত বিকশিত হয়ে উঠতে পারে না। তাঁর চিন্তা-চেতনায় নারী প্রেরণাদায়িনী মানসমূর্তি। নারীর মহিমাকে উপযুক্ত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে তা নারী উন্নয়ন থেকে সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।
রবীন্দ্রনাথের ভাবনায় পটপরিবর্তন ঘটেছে নারীকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পর্বে। কবির চেতনায় প্রথম পর্বে নারী এসেছে অধরা, ছায়াসঙ্গিনী, প্রেরণাদাত্রী রূপে, কিন্তু তারপরে তাঁর কল্পিত নারী তার বিড়ম্বিত জীবনের বোঝা টেনে নিতে নিতে প্রশ্ন করতে এমন কি অভিশাপ দিতেও দ্বিধা করে নিঃ-  কচ ও দেবযানীতে উপেক্ষিতা দেবযানীর তেজোদীপ্ত কণ্ঠে তাই শুনতে পাইঃ- 
‘'তোমা পরে এই মোর অভিশাপ-
যে বিদ্যার তরে মোরে কর অবহেলা
সে বিদ্যা তোমার হবে না বশ
শিখাইবে, পারিবে না করিতে প্রয়োগ।‘'
বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের শেষ সীমায় পুরুষের সমান সম্মানে আগ্রহী নারীর নির্ভীক আত্মপ্রকাশ:-
"পঞ্চশরের বেদনামাধুরী দিয়ে
বাসররাত্রি রচিব না মোরা প্রিয়ে।
ভাগ্যের পায়ে দুর্বল প্রাণে
ভিক্ষা না যেন যাচি।
কিছু নাই ভয়, জানি নিশ্চয়
তুমি আছ, আমি আছি।"
‘মুসলমানীর গল্পে’ কমলাকে মুসলমান যুবকের প্রেম নিবেদনের উত্তরে বলতে শুনি-
‘'যে ধর্ম চিরদিন আমাকে জীবনের সব ভালবাসা থেকে বঞ্চিত করেছে, সে ধর্মের মধ্যে তো’ দেবতার প্রসন্নতা কোনদিন দেখতে পেলুম না………যে দেবতা আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন সেই ভালবাসার সম্মানের মধ্যে তাঁকেই পুজো করি, তিনিই আমার দেবতা, তিনি হিন্দুও নন মুসলমান নন।‘'
          আজকের নারীমুক্তি আন্দোলনেও রবীন্দ্রভাবনা প্রেরণাস্বরূপ এবং সেজন্যই রবীন্দ্রনাথ একবিংশ শতাব্দীতেও প্রাসঙ্গিক ও অপরিহার্য। কবির কথাতেই বলতে হয়-
‘'নতুন সভ্যতা গড়ার কাজে মেয়েরা এসে দাঁড়িয়েছে- প্রস্তুত হচ্ছে তারা পৃথিবীর সর্বত্রই। তাদের মুখের উপর থেকেই যে কেবল ঘোমটা খসল তা নয়, যে ঘোমটার আবরণে তারা অধিকাংশ জগতের আড়ালে পড়ে গিয়েছিল সেই মনের ঘোমটাও তাদের খসছে'’।   

এই যে আমরা আলোচনা করতে বসেছি রবীন্দ্রনাথ প্রাসঙ্গিক কিনা, এটাই বোধহয় প্রমাণ করে তিনি আজও স্বস্থানে বিরাজমান। সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলি, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বা কুমুদরঞ্জন মল্লিককে নিয়ে তো এই আলোচনা হচ্ছে না!
    প্রথমে বিনোদনে আসা যাক। আধুনিক, রক, পপ, জীবনমুখী অনেক তো হলো। তবু আজও, সব শিল্পীই চান তাঁর একটা রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম হোক। আজও বাংলা চলচিত্রে টানাপোড়েনের দৃশ্যে আবহতে বাজেন রবীন্দ্রনাথ। নতুন শিল্পীরা নতুন আঙ্গিকে হলেও, ঠিক ফেরেন তাঁর কাছে।
    গড়পড়তা শিক্ষিত বাঙালীকে হঠাৎ পাঠ্যপুস্তকের বাইরে কোনো কবিতা বলতে বললে শতকরা নব্বই ভাগ প্রশ্ন , আফ্রিকা বা বীরপুরুষ বলবেন। দু চারটি গল্প মনে করতে গেলেই এসে যাবে কাবুলিওয়ালা বা দেনা পাওনা। 'পুরানো সেই দিনের কথা 'বা 'আমরা সবাই রাজা' দু এক কলি জানেন না এমন বাঙালী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আজও রবীন্দ্র নজরুল সন্ধ্যাই পালিত হয়, রবীন্দ্র পরবর্তী এত প্রমুখ কবি থাকা সত্ত্বেও।
   এই ইন্টেরিয়ার ডেকোরেটিংয়ের  যুগেও বাঙালীর দেওয়াল জুড়ে মানানসই হয়ে যান রবীন্দ্রনাথ। দু চারটে বই রাখার জায়গা থাকলে সঞ্চয়িতা বা গীতাঞ্জলি ঠিক শোভা পাবে, গানের চর্চা থাকলে বাড়িতে থাকবে গীতবিতান।
    আসলে তিনি হলেন আকাশের মতো। আপনি ওপরদিকে চান বা না চান, তিনি আপনার জগত ছেয়ে আছেন।



অধ্যাপক ক্ষিতিমোহন  সেন সকালে  উত্তরায়ণের বারান্দায়  গুরুদেবের সঙ্গে কথা বলছেন। কবির খাস ভৃত্য, খুব সুন্দর দেখতে তরল পানীয় দিয়ে গেল। কবি অল্প করে চুমুক দিয়ে  রসিয়ে রসিয়ে খেতে লাগলেন। ক্ষিতিমোহন  মনে মনে বলছেন  সুন্দর শরবত। কবি  হাবভাব দেখে বুঝলেন আলোচনায় নয়, ক্ষিতিমোহনের রস খাওয়ার দিকেই মন। ভৃত্যকে ইশারা করলেন, একটু রস দিয়ে যেতে। গ্লাসে রসের পরিমাণ অল্প দেখে মনোক্ষুন্ন হলেন ক্ষীতিমোহন। সবটাই এক চুমুকে মুখে দিয়ে না গিলতে পারছেন না ফেলতে পারছেন। মুখ বিকৃত করে কোনরকমে রসটা গিলেই   ফেললেন। উগলে দিলে অসম্মান করা হবে।  
আরও একটি ঘটনা। ছাত্রদের ব্রাউনিং এর নাটক পড়ে শোনাচ্ছেন।ভৃত্য সাধুচরণ সুন্দর  কাঁচা সোনার রঙের এক গ্লাস পানিয় দিয়ে গেল। প্রমথনাথ বিশী গুরুদেবের প্রসাদের জন্য উসখুস করতে লাগলো। গুরুদেব জিজ্ঞাসা করলেন, কিরে খাবি নাকি? প্রমথ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।  সোনারবরণ শরবতে একটু চুমুক দিয়ে বুঝতে পারলেন প্রমথনাথ বিশী কি বিষ নিজে থেকে নিয়েছেন। কিন্তু গুরুদেব দিয়েছেন আর খাবে না, সে হতে পারে না, হাসি মুখ করে সমস্ত গ্লাসটা শেষ করলেন। কবি বললেন কেমন লাগলো? প্রমথ বলল ভালো। গুরুদেব তখন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন এই সোনার বরন শরবত সবাই খাবি এটা নিমপাতার শরবত । এই শরবত শরবৎ হলেও এরা আমাদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়।
        আমরা বিশ্বকবির রচনার সঙ্গে পরিচিত, উনি মানুষের স্বাস্থ খাদ্য সম্পর্কে ও বিশেষ সচেতন ছিলেন। শৈশবে ঠাকুরবাড়ির কুস্তির আখড়ায় অংশ নিতেন। শান্তিনিকেতনেও খেলাধুলার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। ভারতবর্ষে প্রথম উনিই মেয়েদের জুজুৎস শিক্ষার প্রচলনের জন্য  জাপান থেকে শিক্ষক আনেন।
      রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন শৈশবের পূর্ণ বিকাশের জন্য সুষম খাদ্য, খেলাধূলা একান্তই প্রয়োজনীয়।  বিনাব্যায়ে,  আমাদের দেশীয় , গাছ-গাছড়ায়,  খেলাধুলায় মনোনিবেশ করা উচিত। 




এখন পৃথিবীব্যাপী এক মহামারী পেরোচ্ছি।পেরোচ্ছি অনেক মৃত্যু।আপনিও এভাবেই পার হয়ে এসেছেন অনেক মৃত্যু লেগে থাকা সময়।বন্ধু-সন্তান-অনেক অনেক প্রিয়জনের মৃত্যু বিষাক্ত সাপের মতো ছোবল দিয়ে গেছে আপনার অস্তিত্ব জুড়ে,ভিতরে হয়েছেন ক্ষতবিক্ষত অথচ বাইরেটা রয়ে গেছে শান্ত।আপনাকে ঈশ্বর বলে মানিনি কোনো দিন,আপনি এক রক্তমাংস প্রাণ তাই পুড়তে পুড়তে  যখন লেখেন

‘‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি বিচিত্র ছলনাজালে,হে ছলনাময়ী।
মিথ্যা বিশ্বাসের ফাঁদ পেতেছ নিপুন হাতে, সরলজীবনে’’

বুঝতে ভুল হয়না এইসব চলে যাওয়া কতটা রক্তক্ষরন ঘটাতো আপনার কবিতাময় হৃদয়খানিতে। সত্যদ্রষ্টা ঋষির মতো জীবনের পরতে পরতে অনুভব করে গেছেন মিথ্যার ছদ্মবেশ।অনুভব করেছেন মিথ্যা হল বর্ষা আকাশের কালো মেঘের মত,সত্যসূর্যকে ক্ষনিকের জন্য ঢেকে দিলেও যা শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয় পরাজয় স্বীকার করে আর ঝলমলিয়ে ওঠে রোদ্দুর,যেন বলে,হে শ্যামল সুন্দর পৃথিবী এসো ধারাস্নান করে যাও এই রঙের বরিষনে তোমার মাটি তোমার জল তোমার বায়ু তোমার ফল পূণ্য হোক,পূর্ণ হোক....।
            আপনি ফিরে ফিরে এসেছেন এ জীবন জুড়ে বারবার সরকারী হাসপাতালের রাতজাগা চোখ যখন ভেঙে পড়ছে ক্লান্তি জড়িয়ে তখন দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে মুছিয়ে দিয়ে দিয়েছেন সেই ক্লান্তি।মহাকালের পার থেকে কানে ভেসে এসেছে "ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো"ক্ষমা! না!ক্ষমা আপনি করেননি,যে মিথ্যা,যে কপটতার আশ্রয় নিয়ে বৃটিশ রাজশক্তি শাসন আর শোষন করে চলেছিল আপামর ভারতবাসীকে সেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে ক্ষমা আপনি করেননি।হাতে রাখি নিয়ে পথে বেরিয়ে পরেছিলেন বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে,সারা দেশ উদ্বেল হয়ে উঠেছিল- হ্যাঁ ওইতো ওইতো কবিও পথে নেমেছেন,কবি আমরা আছি আপনার সাথে...আমরা আছি! আমরা এখনো আছি কবি আমরা আছি।আমাদের বুকের হাড় পাঁজর গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেলেও সেই লাইনটা যাতে আপনি বলেছিলেন "অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে"সেই লাইনটা অমোঘ হয়ে থেকে গেছে।আসলে মাথার ওপরে আকাশ থাকলে সেই আকাশ দেখার জন্য নীচু মাথা উঁচু করতে বাধ্য হয় সবাই আর আপনি তো অসীম আকাশ!
           বহতা নদীর মতো এ জীবনে এসেছে দুঃখ-শোক,এসেছে খুশি-আনন্দ আর আপনি সর্বদা  আগুনপরশমনি হয়ে আলোকিত করেছেন জীবনের কন্টকাকীর্ণ পথ।রক্তঝরা দিনে প্রিয় বন্ধু হয়ে শুশ্রূষায় নদী বইয়ে দিয়ে বলেছেন-এস অবগাহন করো,স্নিগ্ধ হও,শুদ্ধ হও!জানি জীবন মরনের সমস্ত সীমানা শেষ হয়ে গেলে প্রিয় বন্ধুর বেশে আপনি থাকবেন,থাকবেনই।

‘‘বনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে,
বন্ধু হে আমার, রয়েছ দাঁড়ায়ে ॥
এ মোর হৃদয়ের বিজন আকাশে
তোমার মহাসন আলোতে ঢাকা সে,
গভীর কী আশায় নিবিড় পুলকে
তাহার পানে চাই দু বাহু বাড়ায়ে ’’


যতবার কোনো দেশের ম্যাপ আঁকতে চেষ্টা করেছি
ততবারই তৈরি হয়ে গেছে নতুন এক একটা দিকভ্রান্ত উত্তরায়ণ-
কত খোয়াই তাতে এঁকে রেখেছে উড়ো ছাইয়ের তৈলচিত্র 

এই দেশে আঁকা নেই সড়ক। অথবা জলপথের রুট
সুক্ষ্ম দড়ির উপর হেঁটে এখানে পেরোতে হয় এক একটা সরলরৈখিক সন্ধে।

ভাতের যোগান সর্বত্র সমান। সকলে পেট ভরে খায় দুবেলা-
তাও চওড়া রাস্তার দুধারে বিপর্যস্ত বালি
প্রত্যেকটি বট, পলাশ আর ছাতিমের হাতে শক্ত করে ধরা আছে গীতাঞ্জলি, সং অফারিং...
ঘোলাটে মাটির সামনে যারা শুয়ে আছে বুক চিতিয়ে
তাদের অস্তিত্বটুকুও এঁকে রাখবার কথা নতুন মানচিত্রের আনাচেকানাচে। 

পাহাড়, পর্বত, মালভূমি, সাগর সমেত অবশেষে প্রকাশ হয় দেশের মানচিত্র 
পামির গ্রন্থির শিরা যেমন ছুঁয়ে গেছে উদিচীর বারান্দাটুকু
সেভাবেই ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তিস্থল বলে সকলে চিনে এসেছে উদয়নের বরাদ্দ বৈঠকখানা-
পর্ণমোচী বনভূমির মতো রাজধানী ঘিরে রেখেছে যে বেপরোয়া সাঁওতাল কিশোর
সে এখন পাকাপাকিভাবে শ্যামলীর বাসিন্দা...

সমস্ত দিনের শেষে পশ্চিমের ডাগর রোদটুকু এখন পুনশ্চর বারান্দায় পড়ে
হেলে পড়া ইজি চেয়ারের বুকে পেতে রাখা থাকে একখণ্ড ছোটনাগপুর
ধনুষ্কোডির শেষ বিন্দুটুকু প্রতিটা সূর্যাস্তের সাথে মাথা রাখে কোনার্কের ছাদে-

সম্পূর্ণ প্রকাশের পরেও আমার ম্যাপ আঁকা বাকি
এবার আমি সন্তর্পণে এঁকে রাখতে চেয়েছি গোবী-সাহারার সীমানা...
তখনই কোপাইয়ের অভিমুখ খুঁজে আমার কাগজ ভিজিয়ে দিল চারুলতা-লাবণ্য-হৈমন্তীরা।


ভেবেছিলাম যৌবনের অবিমৃষ্যকারিতায়, 
আর কটা বছরেই তাঁর সবকটা কবিতা পড়ে নেবো, 
নয় নয় করে তিনটে দশক হয়ে এলো প্রায়।
এই তো সামনের ছুটিতেই হাত দেবো, 
এই করে বিকেল গড়িয়ে এলো প্রায় সন্ধ্যায়।
ছোটোবেলার আবৃত্তি বা কৈশোরের চিরকুটের চেনা লাইন,  
আজও খুঁজে ফিরি ছিঁড়ে যাওয়া সঞ্চয়িতায়,
সে সব সোপান পেরিয়ে তাঁর মন্দিরে যাবো,
অন্তত এখন অবধি তার আশা ক্ষীণ।  
তবু, জীবনের প্রতি স্তরে ও স্তবকে, 
ফিরে ফিরে আসি আমি তাঁর কবিতায়, 
রচনাবলীর কোণে পড়ে থাকা কোনো অপঠিত কাব্যে নয়, 
চেনা পংক্তিরাই বারংবার ধরা দেয় অদ্ভুত বিমূর্ততায়,
চিরপুরাতন এক শাশ্বত সত্য নিয়ে আসে নব পরিচয়।
বড় ক্লেদে ভরে গেছে জীবন এখন, 
ক্লান্ত ডানারা আজ ওড়বার আশা ছেড়ে ঘুম যেতে চায়,
পরাজয় মেনে নিয়ে শত্রুকে করতে চায় অস্ত্র সমর্পণ।
ঠিক তখনই, ম্রিয়মাণ সন্ধেবেলায় ও কার স্বর শোনা যায়,
অস্ফুট, কিন্তু কি দৃঢ়, প্রত্যয়ী,  কি অমোঘ সে ডাকা,
পিছু হটতে থাকা জীবন আচম্বিতে আবার ঘুরে দাঁড়ায়,
কান পেতে শোনে...' এখনই অন্ধ বন্ধ কোরো না পাখা...'
এই আঁধার যুগে, পদে পদে ভয়ে থাকি, এই বুঝি পা পিছলায়,
এই বুঝি তিলক বা ফেজ ভূতে পিছু থেকে গেঁথে দিলো ধর্মের তির ,
দ্রিমি দ্রিমি বেজে ওঠে চেনা শব্দরা, অহেতুক ভীতু বুকে সাহস জোগায়,
আমাকে বলেন রবি চিত্ত করে ভয়শূন্য, উচ্চে রাখো শির....




সে ছায়া স্নিগ্ধ আজও সেও দীর্ঘতর
রবির কিরণ পড়ে প্রত্যয়ে-মননে
কেবল বৈশাখ নয় বা শুধু শ্রাবণে
কখনোবা জনমনে সে প্রখরতর।
যখন হৃদয় কাঁদে কথা মনোহর 
ছুঁয়ে যায় সুরগুলো, যা ছিল সঘনে
মেঘ যেন উড়ে যায় মানস বিজনে
তোমাকেই ছুঁয়ে থাকি, চিত্তশুদ্ধিকর!
শতক হারিয়ে যাবে রবে ধ্রুবতারা 
পৃথিবী বৃদ্ধ হবে তবুও নতুন 
সুর, কথা, কবিতারা, যা কিছু লেখনী। 
আজন্ম তোমার কাছে সারস্বত ঋণী
এখনো যে মূক মুখে ভাষার আগুন
তখনি ভাবনা যেন, নই রবি-হারা।

কেউ দেখেছো ছবির খাতায়
কী এঁকেছি ছবি?
একগুচ্ছ শিকড় মুখে
সে একজন কবি।

বনের মাঝে বনস্পতি
তিনি বৃক্ষরাজ, 
সব ছাড়িয়ে উচ্চ অতি
জগৎ জোড়া কাজ।

চোখ দুটি তার আলোর আধার
বিশ্বে ছড়ায় আলো, 
সেই কবিটির দুই নয়নে
বিদ্যুৎ চমকালো। 

জোড়াশাঁকোয় জন্ম হলেও
বিশ্বজোড়া নাম, 
নোবেল পেয়ে বাড়িয়ে দিলেন
দেশেরই সুনাম। 

কবির কবি মহাকবি
আঁকছি যে তার ছবি, 
প্রাণের ঠাকুর রবি ঠাকুর 
পুব আকাশের রবি।
আমি তো মানুষ ঠাকুর চিনেছি 
রামকৃষ্ণদেব আর রবীন্দ্রনাথে 
আমি মাটির গড়া পুতুল কিনেছি
 তার পূজো হয় নৈবেদ্যর  সাথে। 
 
আমি চোখের সামনে দেবতা দেখি
যে আমায় জ্ঞানের আলো জ্বালে 
আমি মাটির মূর্তিতে দীন বিশ্বাসী 
যখন আনন্দ লেখে সকল ভালে । 

আমি মহা জীবনের গান শুনি
 যেখানে জেগে ওঠে ভৈরব বাণী
 আমিই  মানবতার ঠাকুর চিনেছি 
 যিনি দুখির দুখে হাহাকার দানী। 

আমি সহজপাঠে গ্রাম ছবি আঁকি 
আবার চণ্ডালিকা জেগে উঠি 
আমি বিসর্জনের গান শুনি
 আবার গীতাঞ্জলির জন্য ছুটি। 
 
আমি মহা-প্রলয়ের মাঝে খুঁজি
কে  মানব ঈশ্বরে বিশ্বাসী যিনি
আমি থরথর শ্মশানের চিতা গুনি
ওখানেই হারিয়ে যায় আমার মিনি । 

কেন এমন বোশেখ আসে আরবার
 এখন তো বিষাদের বাঁশি ভাঙে সুর
 যেখানে শান্তির নিকেতন কনক কানন
ছাতিম বনে প্রেম কী ছুঁয়ে যায় ওই দুর।


একটা চিলেকোঠা। ওখান থেকে খুব ভালো করে পৃথিবীটা দেখা যায় না 
তবু ওই সংকীর্ণতাই তাঁর লুকোনো আশ্রয়। 

আমি একটা দালানকোঠাতে হাজারখানেক ঘরে একা রাজত্ব করি। 
তবু  আমার কপালে একটা চিলেকোঠা জোটেনি।

সোনাঝুরিতে হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় কতো কিলোমিটার? 
প্রেম থেকে পূজা, পর্যায় ভাগের সময় কতটা সাহসী হতে হয়? 
ক'টা প্রিয়জন চলে গেলে নিজেকে শোকগ্রস্ত বলতে পারি? 

শিলাইদহ থেকে আমার দালানকোঠার দূরত্ব মেপেছেন উঁনি  
গাছের ছায়াকে শিখিয়েছেন সমান্তরাল হবার পদ্ধতি 
নিষিদ্ধতাকে দু'হাত খুলে প্রশ্রয় দিয়েছেন 

সকলের নেশার খোরাক জোগান দিতে দিতে
 নিজেই একদিন  মাদকদ্রব্য হয়ে গেলেন।

পরাধীনতার ঘন অন্ধকার যুগে
কুসংস্কার ভেদভাবে আড়ষ্ঠ বাংলায়
পুণ্য উদয় তোমার, হে রবীন্দ্রনাথ।
কবিতা কথায় গানে প্রদীপ্ত কিরণ,
সাহিত্যের সপ্তসিন্ধু বঙ্গ উপকূলে
রচিলে নিপুণ করে,বিশ্বের বিষ্ময়।
সাধনার তপোবন শান্তিনিকেতন
ছড়ালো ভারতী মন্ত্র,ভ্রাতৃত্ব বন্ধন।

অশনি সংকেত আজ পশ্চিম গগনে,
বিভাজিত বঙ্গভাষী ক্রমে হীনবল।
স্বাতন্ত্র্যে অনাস্থা বৃদ্ধি,পথ বহুগামী,
ক্ষয়রোগে জরাগ্রস্ত সমৃদ্ধ বাঙ্গালী।
আশার প্রহর গুনে সারা বঙ্গভূমি,
আবার উদিত হোক মুক্তিদাতা রবি। 


আয় বেরিয়ে আজকে সবাই
ভোরটা দিল ডাক,
সবার জন্য এনেছি আজ
পঁচিশে বৈশাখ৷

আলো হতে, ভালো হতে
ঠাকুর নিয়ে হাট,
প্রভাত ফেরির রবি গানে
ভরাতে মাঠ-ঘাট৷

আজকে রবির জন্মদিনে
পদ্যময় বিশ্ব,
শূন্যে-পূর্ণে রবীন্দ্রনাথ
নামই এক দৃশ্য৷

ইলশেগুঁড়ি আজকে যদি
করায় রবি স্নান,
স্নানের কণা ছুঁইয়ে নেবে
বোশেখি মন-প্রাণ৷

ঘরে আমার রবীন্দ্রনাথ---ধূসর আর
ফ্যাকাশে কালোর।

যিনি ওই ছবিটি
উপহার দিয়েছিলেন---তাঁর নামও খুব 
আবছা ক্রমশ।

 বহুদিন ঝাড়পোঁছ 
নেই। ধুলোর ওপর ধুলো জমতে জমতে 
ছবির ভেতর ছবি ফুটে ওঠে।

 কোথাও 
খাদের মতো। আমরা সেই অতল খাদে
ডুবে যাচ্ছি নাকি! কোথাও বালির পাহাড়।
শীর্ষে আরোহী কে! কোথাও গাঢ় অন্ধকার,
এবং তার পাশ থেকে নির্জলা এক নদী
বেরিয়ে এসেছে। ওতে কী অবগাহন হবে!

ফ্যাকাশে বা যাইহোক, ঘরে আমার রবীন্দ্রনাথ
আছেন। আর এই সহজ বোধে কালো নীল অন্ধকারেও
আমি ছুটে যেতে থাকি।


আমরা খুঁজি ফন্দিফিকির
        তিনি খোঁজেন ফুল
আমরা ভাসি মাঝ দরিয়ায়
       তিনি দেখান কূল
মানব জাতির সামনে
         তখন গভীর রাত
তখন যিনি পথটি দেখান
         তিনিই রবীন্দ্রনাথ


জীবনে অম্লজান তুমি, আবেগের শান্তিনিকেতন ।
তোমার অনুপস্থিতি, পোড়ায় এ পাপ দেহ-মন !

শ্রাবণের ধারা-পাতে, অক্ষরমালা ভিজতে থাকে,I,
আমরা সেই কবেই ফেলেছি, সহজপাঠ ছুঁড়ে !

সমুদ্রস্নানে যে তৃপ্তি আছে, রবীন্দ্রগানে-ও তাই,
তাই তো কেবল ঘুরে-ফিরে, তোমাতেই ফিরে যাই ।


"হে নূতন দেখা দিক বার বার,
জন্মেরও প্রথমও শুভক্ষণ।"

লহ তুমি প্রণাম,
বিশ্বকবি রবি ঠাকুর ।
তোমার জন্মদিন
স্মরণীয় করে রাখে,
ক্ষণিকের মুহূর্তেরা -
যেন রঙিন স্বপ্ন আঁকে।
তোমার লেখা গান -
শুনিয়া জুড়ায় প্রাণ,
তোমার সাহিত্য
ঠিক যেন কথামৃত।
তোমার লেখা কাব্য কবিতা
আধারের পথ চলা।
তুমি ছন্দে গীতিতে
ভরিয়ে রেখেছো বিশ্ব কে।
তাই তুমি বিশ্বের কবি -
                               রবি ঠাকুর।
আজও তোমার নাম
অক্ষরে অক্ষরে অমর হয়ে আছে।




যখন আমার হৃদয়াকাশে 
কালো মেঘের ঘনঘটা 
প্রিয়জনের বিয়োগ ব্যথায় 
চোখে আমার শ্রাবণ ধারা
তখন আমায় সান্ত্বনা দেয় 
তোমার কবিতা, তোমার গান। 
আনন্দেতে যখন আমার 
মনের মাঝে ময়ূর নাচে
তখন যে আমার কানে
তোমারই গান বাজে। 
সুখে-দুঃখে,আনন্দে-শোকে
নিশ্বাসে-প্রশ্বাসে
তোমার উপস্থিতি 
আমায় বাঁচিয়ে রাখে।
তোমার গানে তোমার কথায় 
তোমায় করি স্মরণ 
২৫শে বৈশাখ এলে 
তোমায় করি বরণ।


তুমি আছো ঠাকুর সবার মনের মন্দিরে 
হয় না পূজা তোমার মন্দির মসজিদ গির্জায়,
তোমার সৃষ্টির ধারায়  সিক্ত আমার মন প্রান
মন মন্দিরে থাকবে ঠাকুর আজন্মকাল। 
সুখ দুঃখের ভাষায়  তুমি, প্রেম পুজারও  মালা
তোমারই লেখায় সাজিয়েছি  জীবনের বরণ ডালা। 
কত আঘাত সয়েও শান্ত হয়েনি তোমার হাত
কবিতা গল্প উপন্যাসের মধ্যে করেছো পৃথিবী মাত।




জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মেছিলেন রবি 
তার অনুপ্রেরণায় হয়েছি আমি  কবি ।
রাখিবন্ধন উৎসব তুমিই শুরু করেছিলে ।
বিদ্বেষ ত্যাগ করে মানুষকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলে ।
জন-গণ-মনর স্রষ্টা তুমি
তোমার গান, গল্প ,কবিতায় ভারত হয়েছে সাহিত্যের পুণ্যভূমি ।
নদীর মতো তুমিও আমাদের হৃদয় দিয়ে বও
২৫শে বৈশাখ চলে গেলেও তুমি চিরদিন আমাদের হৃদয়ে রও ।
তোমার গান,কবিতা শুনলে সবার মন প্রাণ যায় ভরে
তুমি এখনো বিরাজ করছো সকলের হৃদয়ে এবং প্রত্যেক ঘরে ঘরে ।
আমার কবিতা এখানেই করলাম শেষ 
তোমার মতো সাহিত্যিক পেয়ে ধন্য হয়ে হয়েছে দেশ

শঙ্খ ঘোষ স্মরণে


শব্দবিহীন ছেড়ে যাওয়া কঠিন দুঃসময়,
গর্জে ওঠা কলম থামে আজ শঙ্খের লয়।
নিথর দেহে প্রবাদপ্রতিম সূর্য গেল পাটে,
রইল পড়ে পথের দিশা মাটির পথে-ঘাটে।
যদিও দেহ লোকান্তরে শব্দ আছে জেগে,
শোক তবুও মনে তুফান ওঠে তড়িৎ বেগে।
তাঁর কলমে পথের দিশা আজকেও ভাস্বর,
অমর তারা সাদা কালোয় প্রতিবাদের স্বর।
স্রোতের বিপরীতে থেকেও আস্ত প্রতিষ্ঠান,
শেষের দিনেও শিরদাঁড়াটা ঋজু এবং টান।
যায়নি বেচে কলমটা তার তোষণমাখা স্বরে
প্রতিবাদের কণ্ঠ হয়েই বিরাজ আপামরে।
লড়াই ছিল মাটির সাথে সাম্যের দরবারে,
প্রতিবাদের কলম হয়ে ঝলসেছে বারবারে।
অন্তরেতে ডাক পাঠিয়ে বলছে জাগো ওরে
শিরদাঁড়াতে মানুষ চেনো প্রতিদিনের ভোরে। 

বদ্ধ বাতাস হাতছানি দেয় চিতায় জ্বলে কবি
সমকালের স্রোতে বাঁচে শেষ লড়াইয়ের ছবি। 

[দুবাই, ২১শে এপ্রিল ২০২১]

সৌমিত্র স্মরণে

খিড়কি থেকে সিংহ দুয়ার শূন্য শুধু শূন্য 
অপুর সংসার আজ অন্ধকারে পরিপূর্ণ।
ফেলুদা আজ অজানা রহস্যের সন্ধানে 
দিলেন পাড়ি তিন ভুবনের পাড়ে।

অভিনয়ের সাথে পড়লেও সাত পাকে বাঁধা
আগেই হয়েছিলো সাহিত্যের সাথে মণিহার গাঁথা।
কবিতা,আবৃত্তি,অভিনয় চলেছে সমান্তরাল 
কাণ্ডারী হয়ে চলচ্চিত্রের ধরেছো যে হাল।

শ্রেষ্ঠ বাঙালীর শিরোপা তোমারেই যে সাজে 
কাজ ফেলে সব,পা দিলে কোন ছুটির ফাঁদে।

মেরুদণ্ডহীন কাপুরুষ তুমি তো নও 
 কাঁচ কাটা হিরে, রয়েছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
অসুখের অশনি সঙ্কেত এসেছিলো আগেই
তবু ছুটির ঘণ্টা বেজেছে নিরবেই।

এ কোন অর্ন্তধান রহস্যের করলে শুরু অভিযান?
নিভলো দীপের আলো, বাজলো বেলাশেষের গান।

খুঁজে বেড়াই পিস হাভেন থেকে সংসার সিমান্তে
এ বাংলায় ফিরে এসো নব রূপে, নব সাজে।
ফেলুদা তুমি চির উজ্জ্বল বাঙালীর মননে
গণদেবতা,জানাই শ্রদ্ধা তোমার ঐ দুই চরণে।








No comments

Theme images by luoman. Powered by Blogger.